বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার গত ৫ই অগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের উপর লাগু থাকা ৩৭০ এবং ৩৫(এ) ধারা বাতিল করে যাতে রাজ্যের তকমা মুছে জম্মু ও কাশ্মীরকে দুই টুকরো করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আজ কলকাতা প্রেস ক্লাবে সিপিআই(এম-এল)-রেডস্টার, সিপিআই(এম-এল) ও পিপ্‌ল্‌’স্ ব্রিগেড একটি যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করে। সাংবাদিক সম্মেলনে এই তিনটি বামপন্থী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত থেকে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন এবং বিজেপি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বৃহত্তর লড়াই-এর ডাক দেন। সেজন্য আগামী ২৪শে অগস্ট তারা একটি গণ-কনভেনশনের ডাক দিয়েছেন।
তিনটি রাজনৈতিক দল তাদের যৌথ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, জম্মু কাশ্মীর হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট ২০১৮-তেই একটি রায়ে জানিয়েছেন যে ৩৭০ ধারাটি অস্থায়ী নয় এটি স্থায়ী। তাই এই দুটি ধারা বাতিল বা সংশোধন করতে সরকার এবং সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি দেশের বিচার-ব্যবস্থাকেই খারিজ করে দিয়েছেন‌।
সাংবাদিক সম্মেলনে এই তিন বামপন্থী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা বলেন, ভারতের সকল প্রদেশের সার্বভৌমত্ব, প্রতিটি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার স্বীকৃত। এই ধারা দুটি তুলে নেওয়ার মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষকে নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলার চক্রান্ত করা হচ্ছে। বহুভাষা, বহুজাতি এবং বহুসংস্কৃতির দেশ ভারতে প্রতিটি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের উপরেই জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা সম্ভব। বহুত্ববাদকে অস্বীকার করার প্রক্রিয়া কাশ্মীর দিয়ে কেবল সূচনা হলো, ধীরে ধীরে অন্য প্রদেশগুলোর উপরেও এই কশাঘাত আসতে চলেছে। লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করে বলপূর্বক এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা চাপানোর পরিণাম বালিকে হাতের মুঠোয় রাখার নামান্তর বলেই দাবি করেন তিনটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলেন, এর মাধ্যমে পরোক্ষে সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছন্নতাবাদকেই আরো মদত দেওয়া হচ্ছে ।
অমিত শাহ সংসদে ৩৭০ ধারা বাতিলের সুফল হিসেবে তুলে ধরেছিলেন, সরকারের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কাশ্মীরে বৃহদায়তন শিল্পের জন্য লগ্নি আসার পথ প্রশস্ত হলো। এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পিপ্‌ল্‌’স্‌ ব্রিগেডের কনভেনর বাসুদেব নাগচৌধুরী বলেন, “কর্পোরেটদের তাড়নাতেই কি চটজলদি ৩৭০ এবং ৩৫-এ ধারা বাতিল করা হলো, যাতে কাশ্মীরেও তারা তাদের লুঠ চালাতে পারেন, গোটা দেশে যেমনটা চালাচ্ছেন?”
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কাশ্মীর-নীতির বিরোধিতা করে আহূত কনভেনশন থেকে নতুন বামপন্থী ঐক্যের সূচনা হয় কিনা তাই এখন দেখার।

প্রেস বিবৃতি

গত ৫ই আগস্ট অকস্মাৎ কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার রাষ্ট্রপতির নির্দেশিকার মাধ্যমে সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫-এ ধারা বাতিল করে দিয়ে জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখ-কে তিন টুকরো করে নিজেদের পূর্ণ কর্তৃত্বে আনার ব্যবস্থা করেছে। আমরা নিম্নলিখিত রাজনৈতিক দলগুলি একযোগে চরম স্বৈরাচারী, সর্বগ্রাসী ক্ষমতাকেন্দ্রিক এবং বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সীমান্তে-যুদ্ধে মদত দানকারি এই সিদ্ধান্তের চরম বিরোধিতা করছি।

আমরা মনে করি ভারতের সকল প্রদেশের সার্বভৌমত্ব, প্রতিটি ভিন্ন জাতির মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারই দেশের জাতীয় ঐক্য রক্ষা করার প্রধান শর্ত। আমরা মনে করি জম্মু-কাশ্মীর সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত কেবল সেখানকার মানুষের গণতান্ত্রিক মতের ভিত্তিতেই নেওয়া যেতে পারে; এবং দেশের প্রতিটি প্রদেশের জন্যই তা সত্য। বিজেপি সরকারের এই চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত আখেরে জাতীয় ঐক্যের পরিপন্থী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদকে ব্যাপক ভাবে উস্কানি দেওয়ার কাজ করছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, জম্মু ও কাশ্মীরের হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট গত বছরই তাঁদের রায়ে জানিয়েছেন যে, সংবিধানের ৩৭০ ধারাটি স্থায়ী ধারা। সুতরাং কেন্দ্রের সরকার এবং রাষ্ট্রপতি বিচার-ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা অন্যদিকে দেশের বর্তমান কাঠামোটি ভেঙ্গে পরার চিহ্ন বহন করছে। কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদেরকেও গৃহবন্দী করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে; আর একই সাথে সেখানে মানুষের উপর সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে মোতায়েন করা হয়েছে লক্ষাধিক সেনা।

দুর্ভাগ্যের কথা বিজেপির পক্ষে-বিপক্ষে থাকা একাধিক রাজনৈতিক দল সুবিধাবাদিতার স্বার্থে এর পক্ষে দাঁড়িয়েছে। যতটুকু বিরোধিতা হয়েছে তাও এখন নামমাত্র। আমাদের রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ভোটদানে বিরত থেকে পক্ষান্তরে এই ঘৃণ্য কাজের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।

৩৭০-ধারা বাতিলের এই ‘কালা সিদ্ধান্ত’ ছাড়াও বিজেপি সরকার একটানা এনআরসি, ইউ এ পি এ সংশোধন ও এন আই এ আইনের পরিবর্তন, আর টি আইকে কার্যত তুলে দেওয়া, শ্রম আইনের পরিবর্তন, জিএসটি এবং রেলের ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই, বেঙ্গল কেমিক্যালকে বেসরকারীকরনের একাধিক জনবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে, যার বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে সোচ্চার হয়ে পথে নামতে চলেছি খুব শীঘ্রই। তার জন্য আগামি ২৪শে আগস্ট, ২০১৯-এ আমরা একটি কনভেনশনে আহ্বান করেছি। এই কনভেনশনে যাতে সমস্ত সংগ্রামী শক্তি অংশগ্রহণ করে তার জন্য সবাইকে নিয়ে আলোচনার ব্যবস্থাও আমরা করব।

সংগ্রামী বার্তা সহ
সিপিআই(এম-এল)-রেডস্টার, সিপিআই(এম-এল), পিপল’স ব্রিগেড

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *