ভারতে মোদী-সরকারের কার্যকলাপকে ফ্যাসিবাদের উত্থান বলে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেছে রাজনৈতিক মহল। স্বাভাবিকভাবেই ফ্যাসিবিরোধী জোট তৈরির প্রশ্নটি বেশ গুরুত্বের সাথেই উঠে এসেছে রাজনীতির পরিবৃত্তে। এরই মধ্যে সম্প্রতি বিহার নির্বাচনে বিজেপি-জেডিইউ জোট আবার জিতলেও ‘মহাগটবন্ধন’-এর কট্টর টক্কর এই বহুচর্চিত ফ্যাসিবিরোধী জোটের পক্ষে এক প্রকার সিলমোহর লাগিয়ে দিয়েছে বলাই যায়। পশ্চিমবাংলায় আগামী বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআই(এম) যখন ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের হাত পাকাপোক্ত ভাবে ধরে নিয়েছে, নকশালপন্থীদের একটা বড় অংশ তখন বামেদের তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরার পক্ষে সওয়াল করছে। কিন্তু এধরনের বাম-ডান কমিউনিস্ট-বুর্জোয়া মতাদর্শ নির্বিশেষে জোট আদৌ গোটা দেশ জুড়ে (এবং আমাদের রাজ্যেও) ফ্যাসিবাদের বর্তমান উত্থান রুখতে পারবে কিনা, এবং আরও স্পষ্ট করে বললে, এগুলি আদৌ ফ্যাসিবিরোধী জোট কিনা, সেইটেই তুলে ধরবার জন্যই এই প্রবন্ধের অবতারণা। আমরা শুরুতেই স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, প্রশ্নটির বিচার আমরা এখানে করব কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রেক্ষিত থেকেই। বুর্জোয়া দক্ষিণপন্থীদের একটা অংশের মধ্যেও ফ্যাসিবাদ বিরোধিতার একটা প্রেক্ষিত নিশ্চয়ই আছে, এবং কমিউনিস্ট ও বামপন্থীদের সঙ্গে তাদের জোট করবার কৌশল নিশ্চয়ই তার ভিত্তিতেই। যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নেতৃত্বে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে মিত্রশক্তি গঠন করা কেন প্রয়োজন, সেই প্রশ্নে সোভিয়েত ইউনিয়নের উদ্দেশ্য যা ছিল, এবং অন্যদিকে আমেরিকা ও ইংল্যান্ড-এর যে উদ্দেশ্য ছিল, তা নিশ্চয়ই সম্পূর্ণ ভিন্ন। যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণায় অ্যাটম বোম্বের নিক্ষেপে তা স্ফটিকের মতই স্পষ্ট হয়ে গেছিল। সুতরাং আমরা গোটা আলোচনাটাই করব কমিউনিস্ট বিচাধারায়, কোনও নিরপেক্ষতার ভাঁওতাবাজি না করেই।
তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শুরু করতে হবে কমিউনিস্ট বিচারধারায় ‘ফ্যাসিবাদ’ কী এই প্রশ্ন থেকেই। আজকের দিনে যেকোনো প্রকার তথাকথিত অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী বা একনায়কতান্ত্রিক আচরণকেই ফ্যাসিস্ট বলবার একটা চল তৈরি হয়েছে। কিন্তু এহেন অতি-সরলীকরণ কমিউনিস্ট ও সংগ্রামী বামপন্থীদেরকে বিপথগামী করে, এবং প্রকৃতই ফ্যাসিবাদের উত্থানের সময় ‘রাখালের পালে বাঘ পড়া’-র মতই, আদতে, তার বিপদকে বাড়িয়ে তোলে। ফ্যাসিবাদ সম্পর্কে এহেন সমস্ত ভুল ধারণাগুলিকে নস্যাৎ করে লেনিনের সাম্রাজ্যবাদের বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে (কমিন্টার্ন-এ) ডিমিট্রভ দেখান : “ফ্যাসিবাদ হল ফিন্যান্স পুঁজির সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল, সবচেয়ে ‘শভিনিস্ট’ (তথা স্বজাতিমত্ত বা স্বগোষ্ঠীমত্ত) এবং সবচেয়ে সাম্রাজ্যবাদী উপাদানের প্রকাশ্য সন্ত্রাসবাদী একাধিপত্য”; এবং “পুঁজিবাদের সাধারণ সংকটের সাথে সাথে অর্থনীতির অত্যন্ত গভীর সংকট”-এই এই ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে। এইটিকেই ফ্যাসিবাদের একটা পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা বলা যেতে পারে। প্রশ্ন হল যাকে ফ্যাসিস্ট শক্তি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে (যদি করা হয়ে থাকে), তার এহেন চরম প্রতিক্রিয়াশীল, শভিনিস্ট ও সাম্রাজ্যবাদী পদক্ষেপগুলির বিরোধিতা ব্যাতিরেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই সম্ভব কি ? তাই, আজ যে দলগুলিকে নিয়ে যারা ফ্যাসিবিরোধী মহাজোট গড়ার কথা চালাচ্ছেন, অর্থাৎ কংগ্রেস ও বিভিন্ন রাজ্যের সরকার/বিরোধী দলগুলি এবং মূলধারার কমিউনিস্ট ও বামপন্থীরা, বর্তমান বিজেপি সরকারের সাম্প্রতিকতম চরম প্রতিক্রিয়াশীল, শভিনিস্ট ও সাম্রাজ্যবাদী পদক্ষেপগুলির পরিপ্রেক্ষিতে তারা এই সময় কে কে কী কী ভূমিকা নিয়েছে, তা আগে দেখে নেওয়া দরকার।
চরম প্রতিক্রিয়াশীল পদক্ষেপ
নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকারের চরম প্রতিক্রিয়াশীল কার্যকলাপের মধ্যে প্রধান প্রধান পদক্ষেপগুলি হল নোটবন্ধী, জিএসটি, ৩৭০ ধারার অবলোপ, ইউএপিএ, লেবার কোড ও কৃষিবিল ইত্যাদি।
১) নোটবন্ধী যে কোনও কালো টাকা বা জাল নোট উদ্ধারের জন্য করাই হয়নি, বরং আমেরিকা ও চিনের স্টক মার্কেট থেকে তৈরি হওয়া আর্থিক সংকট সাময়িক ভাবে মোকাবিলার জন্য তার গোটা বোঝাটা সাধারণ শ্রমজীবী জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতেই করা হয়েছিল, তা সজোরে চেপে যায় এই সকল দল। বরং এরা সবাই নোটবন্ধীকে স্বাগত জানিয়েছিল; আর কেবল পদ্ধতি-প্রকরণ নিয়ে কথা তুলে এর আসল উদ্দেশ্য থেকে জনগণের চোখ ঘুরিয়ে দিয়েছিল। এমনকি প্রেস রিলিজ-এও মোদী সরকার যে জাল তথ্য হাজির করেছে, তাও মুখ ফসকেও তুলে ধরেনি এরা। অথচ নোটবন্ধী করে মানুষের থেকে এই বিপুল টাকা তুলে যে ‘মার্কেট স্টেবিলাইজেশন স্কিম’-এ জমা করেছিল সরকার, তা আরবিআই-এর তথ্যে স্পষ্ট ধরা পড়েছে। কেবল বিজেপি-রই নেতা জশোবন্ত সিং পরে জানিয়ে দেন যে আমেরিকার ব্যাপক চাপেই রাতারাতি মোদীকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। অর্থাৎ আমাদের দেশের জনগণের ওপর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এত বড় আক্রমণেও এরা কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ হয়েই থেকেছে। প্রসঙ্গত উলেখ্য, এই ‘মার্কেট স্টেবিলাইজেশন স্কিম’-টি প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলেই তৈরি করা হয়েছিল।
২) জিএসটি-র প্রশ্নেও একই ভূমিকা এদের; বরং কিছু বেশী। বাজপেয়ী সরকার জিএসটি-র মডেল তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করার পর কংগ্রেস সরকারই তাকে সবচেয়ে বেশী এগিয়ে নিয়ে গেছে। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী চিদাম্বরম ২০১০ সালের মধ্যেই জিএসটি চালুর প্রস্তাব আনেন। বাজপেয়ীর সময় থেকেই এই জিএসটি-কমিটির প্রধান ছিলেন সিপিআই(এম)-এর অসীম দাসগুপ্ত। ২০১১-র পর জিএসটি সংক্রান্ত সমস্ত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের অমিত মিত্র। স্বাভাবিকভাবেই, এই সব দলের জিএসটি-বিরোধিতা নাটক ছাড়া আর কিছু হওয়া সম্ভব ছিল কি ?
৩) কাশ্মীরে ৩৭০ ধারার অবলোপ-এর ইস্যুতে রাজ্যসভায় জেডি(ইউ) ছাড়া এনডিএ-র সকলেই একে সমর্থন করে (শিবসেনা ও আকালি দল সহ), উপরন্তু আপ, টিডিপি, ও বিএসপি-ও পক্ষে ভোট দেয়। তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধিতার নামে ওয়াক আউট ক’রে ভোটে বিজেপিকে সুবিধা করে দেয়; তাদের ‘রাজ্যসভার চিফ হুইপ’ সুখেন্দু শেখর রায় ৩৭০ ধারার অবলোপ-কে প্রকাশ্যে সমর্থন করে বিবৃতি দেন। কংগ্রেস তো কার্যত দুই ভাগ হয়ে যায় এই প্রশ্নে; কংগ্রেসের ‘রাজ্যসভার চিফ হুইপ’ ভুবনেশ্বর কলিতা ৩৭০ ধারার অবলোপ-এর পক্ষে দাঁড়িয়ে ইস্তফা দেন। সমাজবাদী পার্টিরও দুই এমপি ইস্তফা দেন।
৪) ইউএপিএ বিল, যার মাধ্যমে যে কোনও ব্যক্তিকে সন্ত্রাসবাদী সন্দেহের নামে গ্রেপ্তার করা যাবে, অর্থাৎ এই সময় ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের সবচেয়ে ধারালো অস্ত্র, তা রাজ্যসভায় পাস করানোর ক্ষেত্রে কংগ্রেস পার্টি পূর্ণ সমর্থন দেয় মোদী সরকারকে। এই কংগ্রেসই লোকসভায় এই প্রশ্নে ওয়াক আউট করেছিল। উল্লেখ্য, তৃণমূল কংগ্রেস এর বিরোধিতা করে, যেখানে পশ্চিমবাংলায় তাদের সরকার যেকোনো গণআন্দোলনকারীকেই ইউএপিএ লাগিয়ে দিতে পেশাদারিত্ব অর্জন করেছে।
৫) নয়া কৃষিবিল, যা আসলে কৃষকদের জীবনকে বড় কর্পোরেট মালিক ও খোলা বাজারের হাতে উৎসর্গ করে দেওয়ার জন্যই হাজির করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নামে এই সব দলকে এক অভিনব নাটক করতে দেখা গেল। রাজ্যসভায় বিরোধীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও নাকি ধ্বনিভোটে পাস হয়ে গেল এই বিল ! এবং তাই নিয়ে এদের কাউকে কোনও মামলা করতেও দেখা গেল না ! এদের দেশ জুড়ে গণআন্দোলনের হুঙ্কার ছাড়ার পর স্বভাবতই দেখা গেল, যত গর্জালো, তার বিন্দুমাত্রও বর্ষালো না।
৬) নাটকের পরিসমাপ্তি হল তখন, যখন কৃষিবিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নামে এই সব বিরোধীরা একজোট হয়ে রাজ্যসভার বাইরে বসে রইলেন আর চরম শ্রমিক-বিরোধী ‘লেবার কোড’ বিনা-বাধায় পাস করিয়ে নিল মোদী সরকার।
চরম শভিনিস্ট পদক্ষেপ
বিজেপির ‘শভিনিজ্ম্’-কে (আদতে যার প্রকৃত উৎস আরএসএস) এক কথায় সংজ্ঞায়িত করা যায় এই বলে যে, এ হল উচ্চবর্ণ-হিন্দু পিতৃতান্ত্রিক স্বজাতিমত্তা (Upper Caste Hindu Patriarchal National Chauvinism)। কিন্তু এই সময়ে তারা এক অন্য কৌশল গ্রহন করেছে। গত তিরিশ বছরে নয়াউদারবাদী রাজনৈতিক অর্থনীতির প্রতিক্রিয়া থেকে যে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ জন্ম নিয়েছে, যা আদতে সাম্রাজ্যবাদের শত্রু নয় বরং তার মদতপুষ্ট এবং তার যমজ ভাই-ই, তাকেই সামনে তুলে ধরে বিশ্বব্যাপী একটা মুসলমান-বিদ্বেষ সৃষ্টি করেছে ফিন্যান্স পুঁজির ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক প্রচার। এর সাথে তালে তাল মিলিয়ে বিজেপি-আরএসএস উচ্চবর্ণ-হিন্দুদেরকে কেন্দ্রে রেখে তার চারপাশে তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষ এবং মুসলমান মহিলাদের সমাবিষ্ট করছে শিশু-ভোলানো টোপ দিয়ে, আর ব্যাপক মুসলমান-বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা এমনকি তাদের প্রচারে হিন্দুত্বের থেকেও বেশী গুরুত্ব পাচ্ছে। এরই ফলে তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষ এবং মহিলাদের বিরুদ্ধে তাদের উচ্চবর্ণ-হিন্দু পিতৃতান্ত্রিক স্বজাতিমত্তাকে সুকৌশলে চ্যাম্পিয়ন করে নিচ্ছে তারা।
সাম্প্রতিক সময়ে এই মর্মে যে সব কাণ্ড তারা ঘটিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল নাগরিকত্ব বিল (CAA), উচ্চবর্ণ হিন্দু সংরক্ষণ, তিন-তালাক বিল, এমনকি সুপ্রিম কোর্ট ও সিবিআই-কে পোষমানা দাঁত-নোখবিশিষ্ট জন্তুতে পরিণত করে রাম মন্দির নির্মাণ ও বাবরি-কান্ডের আসামীদের বেকসুর খালাস।
১) ২০০৩ সালে যখন নাগরিকত্ব আইন সংশোধন হয়, তখন ডঃ মনমোহন সিং কংগ্রেস-এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু (স্বাভাবিকভাবেই অ-মুসলিম) মানুষের নাগরিকত্বের প্রস্তাব করেন, যা সেসময়ে সব সংসদীয় রাজনৈতিক পার্টিই সমর্থন করে (আজকে যারা এর বিরোধিতা করছে, বলা ভালো বিরোধিতার নাটক করছে)। ২০১২ সালে যখন ডঃ মনমোহন সিং দ্বিতীয় ইউপিএ-সরকারের প্রধানমন্ত্রী, তখন সিপিআই(এম) নেতা প্রকাশ কারাত তাঁকে চিঠি দিয়ে এই কথা আবার মনে করিয়ে দেন, এবং তাতে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু (স্বাভাবিকভাবেই অ-মুসলিম) মানুষের উল্লেখের সাথে এমনকি হিন্দু ধর্মের বিশেষ গোষ্ঠীদের (যেমন নমশূদ্র, পন্ড্র-ক্ষত্রিয় ইত্যাদি) কথাও তুলে ধরেন। এখন এই চিঠিটি ‘হয়ত কোনও যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য’ তাঁদের মুখপত্র ‘পিপ্ল্’স্ ডেমক্র্যাসি’-র আর্কাইভ থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছে (অবশ্য আমার মতো অনেকের কাছেই তার কপি রয়ে গিয়েছে)। আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি ২০০৫ সালে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকে ‘ডিজাস্টার’ আখ্যা দিয়ে এনআরসি দাবী করে ডেপুটি স্পিকারের মুখে কাগজ ছুঁড়ে মেরেছিলেন, তাঁর তৃণমূল কংগ্রেসই অকস্মাৎ নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে হুঙ্কার (আসলে ঐ গর্জনের নাটক) জুড়ল। ওদিকে এদের বেশ কিছু এমপি-র অনুপস্থিতিতে নাগরিকত্ব বিল রাজ্যসভায় শান্তিতে পাস হয়ে গেল।
২) আর্থিকভাবে দুর্বলদের সংরক্ষণের নামে আদতে উচ্চবর্ণ-হিন্দুদের সংরক্ষণ চালু করলো মোদী সরকার। এই সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ‘আর্থিকভাবে দুর্বল’-দের কথা বলা হলেও, একদিকে বার্ষিক ৮ লক্ষ টাকা (মাসে ৬৫ হাজার টাকারও বেশী) পর্যন্ত আয়ের মানুষ এর সুবিধা পাবে; আর অন্যদিকে এসসি, এসটি, ওবিসি মানুষেরা এর আওতায় আসবেন না; অর্থাৎ, এটি নির্লজ্জ ভাবে উচ্চবর্ণ-হিন্দুদের সংরক্ষণ ছাড়া আর কিছুই নয়। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসসি, এসটি, ওবিসি সংরক্ষণ না থাকলেও উচ্চবর্ণ-হিন্দুদের এই সংরক্ষণ প্রযোজ্য। রক্তচোষা উচ্চবর্ণ-হিন্দুদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠার এমন এক চরম ‘শভিনিস্ট’ বিল এদেশের লোকসভায় ৩২৩:৩ ও রাজ্যসভায় ১৬৫:৭ ভোটে পাস হয়। বলা বাহুল্য যে “ফ্যাসিবিরোধী মহাজোট”-এর প্রায় সব পার্টিই (কংগ্রেস-তৃণমূল কংগ্রেস তো বটেই) এই বিলের পক্ষে ভোট দেয়। কেবল এআইএডিএমকে ওয়াক আউট করে। ডিএমকে আপ ও বামেদের সমর্থনে সংশোধনী আনলেও তা বিপুল সংখ্যাধিক্যে খারিজ হয়ে যায়; এতে আপ ও সিপিআই ওয়াক আউট করে; কিন্তু অদ্ভুতভাবে সিপিআই(এম) বিলের পক্ষে ভোট দেয় (লোকসভাতেও)। উল্লেখ্য, এই সংরক্ষণ বিল কেবল কেন্দ্র-সরকারী ক্ষেত্রের জন্য হলেও এর পরেই রাজ্য-সরকারী ক্ষেত্রেও এই উচ্চবর্ণ-হিন্দু সংরক্ষণ চালু করেছে পশ্চিমবাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস সহ একাধিক রাজ্যের সরকার।
৩) এনডিএ-শরিক জেডিইউ ও এআইএডিএমকে ওয়াক আউট করার পরেও তিন-তালাক বিলটি রাজ্যসভায় পাস হয় মহাজোটের দলগুলির বেশ কিছু এমপি-র অনুপস্থিতির মাধ্যমে। বলা বাহুল্য, এই দলগুলি এই প্রশ্নে মুসলিম মহিলাদের পক্ষে কোনও আদর্শগত অবস্থান না নিয়ে বিপরীতে মুসলিম ভোট-ব্যাংকের স্বার্থে মুসলিম মৌলবাদের হাত ধরেছে। নিজেদের সুবিধাবাদী অবস্থানের জন্য বিজেপির ভাঁওতাটিকেও খোলসা করেনি এইসব দক্ষিণপন্থী দলগুলি। মোদী সরকার এই বিলের মাধ্যমে মুসলিম মহিলাদের সমানাধিকারের কথা বললেও আসলে মুসলিম সমাজের পিতৃতন্ত্রকে অক্ষত রেখেছে তারা। কারণ এই আইনে তিন-তালাককে ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’ ঘোষণা করা হলেও বিবাহ-বিচ্ছেদ হওয়া মুসলিম মহিলাদের সম্পত্তির ভাগ ও ভরণপোষণ-এর প্রশ্নটি, যেটি আদতে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তা নিয়ে মুখে রা কাটাও হয়নি। শাহ বানুর মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও ঠিক এই কাজটিই করেছিল রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার এবং আজও তার রাজনীতি এই ঘৃণ্য সুবিধাবাদী ও পিতৃতান্ত্রিক মতেই ছেয়ে আছে। স্বাভাবিকভাবেই তাই এই প্রশ্নে মুখ খোলেনি কংগ্রেস-তৃণমূল কংগ্রেস-এর মতো মহাজোটপন্থী দলগুলি আর তাদের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তলেনি সুবিধাবাদী বামপন্থীরা।
8) সুপ্রিম কোর্টের রাম-মন্দির সংক্রান্ত চরম নির্লজ্জ হিন্দুত্ববাদী এবং ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে কুৎসিতভাবে উস্কে দেওয়া একান্ত বেআইনি সিদ্ধান্তের পরেও কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছে সিপিআই(এম)-তৃণমূল কংগ্রেস সহ মহাজোটপন্থী প্রায় সবকটি দল; বরং বিপরীতে এই বস্তাপচা কলঙ্কজনক রায়কে স্বাগত জানিয়েছে তারা সবাই। এমনকি লক-ডাউনের মধ্যে রাম-মন্দিরের ভূমিপূজায় প্রধানমন্ত্রীর অসাংবিধানিক উপস্থিতি (প্রকৃতপক্ষে উদ্বোধন) নিয়ে নীরব থেকেছে সকলে। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস তো সরাসরি অযোধ্যায় রাম-মন্দির তৈরির পক্ষেই সওয়াল করেছে বিগত নির্বাচনে, আর প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সেটাই করেন তার ভূমি-পূজায়। আর এর পরেই সিবিআই-এর স্পেশাল কোর্ট বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রকারী অপরাধীদের বেকসুর খালাস করে এই ব’লে যে, এটা নাকি অপরিকল্পিত ছিল, যখন আগে বহুবার এবং এমনকি সেই রায়ের দিনেও আরএসএস-ভিএইচপি-র একাধিক অভিযুক্ত নেতা মিডিয়ায় খোলা বিবৃতি দিয়ে জানায় যে তারা পরিকল্পনা নিয়ে সচেতন ও সংগঠিতভাবেই ঐ জঘন্য কাজ করেছিল গর্বের সাথে।
চরম সাম্রাজ্যবাদী পদক্ষেপ
সাম্রাজ্যবাদের প্রশ্নে দক্ষিণপন্থী দলগুলির অবস্থান কোনও অজানা বা নতুন বিষয় নয়। সেজন্যই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়বার প্রশ্নে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার মূল অক্ষটি হল প্রধানত যুদ্ধ ও যুদ্ধোন্মাদোনা তৈরির বিরুদ্ধে অবস্থান ও শান্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধের প্রশ্নে কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজ্যের সরকার/বিরোধী দলগুলির, এমনকি সিপিআই-এরও মত তো চিরস্পষ্ট বটেই, কিন্তু সম্প্রতি মোদী সরকার চিন-সীমান্তে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করছে একেবারে সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-এর নির্দেশে, তাতে এদের অবস্থান কী ? বিজেপি সরকার এখনও কেন যুদ্ধ হাঁকিয়ে দেয়নি, এটাই কংগ্রেস সহ অন্যান্য দক্ষিণপন্থী দলগুলির প্রধান আক্রোশের বিষয়। তাই নিয়ে হুঙ্কার দিতেও ছাড়েনি তারা। আর এরাই নাকি ফ্যাসিবিরোধী মহাজোট গড়বে ! আর বামপন্থীরা সেই আশায় বুক বেঁধে বসে রয়েছে ! উল্লেখ্য, সিপিআই থেকে ভেঙ্গে সিপিআই(এম) গঠনের পিছনে প্রধান বিতর্কের বিষয় ছিল চিন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষে যুদ্ধের এবং কংগ্রেসের সাথে সংযুক্ত মোর্চা গঠনের পক্ষে/বিপক্ষে অবস্থান; যারা বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, তাঁরাই সিপিআই(এম) গড়ে তুলেছিলেন। সিপিআই-কে এই প্রশ্নে দক্ষিণপন্থী সংশোধনবাদী বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। আর আজ ? এই উভয় প্রশ্নে সিপিআই(এম) নির্লজ্জভাবে ‘পক্ষে’ অবস্থান নিয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন-জাপান–অস্ট্রেলিয়া-ভারত মিলিতভাবে যে মিলিটারি-জোট ‘কোয়াড’ তৈরি করেছে, তাতেই বা এদের সকলের মত কী ? যখন ফ্যাসিবিরোধী মহাজোটের বাগাড়ম্বর চালাচ্ছে এরা, তখনই এই চলতি সপ্তাহেই এই চার দেশের বিদেশমন্ত্রীরা মিলিত হয়ে ঘোষণা করেছে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে এই ‘কোয়াড’-এর মাধ্যমেই ‘ন্যাটো’-র সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধবাজ কার্যকলাপের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত !
লক্ষণীয়
এই গোটা সময়ের ঘটনাবলীর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য প্রবণতা লক্ষ্য করা প্রয়োজন। ভারতে বিজেপি-আরএসএস-এর উত্থানের সাথে সাথে তার প্রতিক্রিয়ায় ইসলামিক মৌলবাদী শক্তি ‘আইমিম’-এর উত্থান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ‘আইমিম’ সেই একই কৌশল নিয়েছে যা আরএসএস নিয়েছে। তাদের মূল কেন্দ্র ইসলামিক মৌলবাদ হলেও কেবল মুসলমান জনগোষ্ঠীর ওপরেই তারা নির্ভর না করে সাথে নিম্নবর্ণ হিন্দুদের সাথে জোট করছে এবং এদেশে ধর্ম-বর্ণে বঞ্চিত মানুষের সমাবেশ তৈরি করে নিজেদের শক্তি অর্জন করার চেষ্টা করছে। লক্ষণীয়, সাম্প্রতিক বিজেপি-র আনা সমস্ত চরম প্রতিক্রিয়াশীল বিলগুলিকে রাজ্যসভায় পাস করাতে সমর্থন করেছে যে বিএসপি, তাদের সাথেই এখন আইমিম জোট তৈরি করেছে। বিজেপি-আরএসএস-এর বিপরীতে এই প্রতিক্রিয়াশীল জোটও বিহার নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ব্যাপক শক্তি অর্জন করেছে।
অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের সাম্প্রতিকতম চরম প্রতিক্রিয়াশীল, শভিনিস্ট ও সাম্রাজ্যবাদী পদক্ষেপগুলির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া তো দূরের কথা, বরং তার বিরোধিতার বদলে এগুলি সংসদীয় ব্যবস্থায় চালু করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে কংগ্রেস-তৃণমূল কংগ্রেস সহ প্রায় সকল দক্ষিণপন্থী দলই, এমনকি বামপন্থী ও কমিউনিস্ট পার্টিগুলিও বেশ কিছু ক্ষেত্রে। বলা যায়, লোকসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও, রাজ্য সভায় বিজেপি এই সকল চরম প্রতিক্রিয়াশীল, শভিনিস্ট ও সাম্রাজ্যবাদের নির্দেশচালিত প্রায় কোনও বিলই পাস করিয়ে আইন চালু করতে পারত না এই সব মহাজোটপন্থী দলের একাগ্র সহায়তা ছাড়া। সুতরাং যে ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন নিজেই “ফিন্যান্স পুঁজির সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল, সবচেয়ে শভিনিস্ট ও সবচেয়ে সাম্রাজ্যবাদী উপাদানের”-ই রাজনৈতিক রূপ, ফ্যাসিস্ট শক্তিটির সেই সকল কার্যকলাপে, যার মাধ্যমে সে গোটা দেশে তার প্রভুত্ব কায়েম করছে, সেগুলোরই পক্ষে দাঁড়িয়ে সেগুলোকে চ্যাম্পিয়ন করতে অকুণ্ঠ সাহায্য করলো যারা, তারা আদৌ ফ্যাসিবিরোধী ফ্রন্ট গড়ে তুলতে পারে ? বলা ভালো, তাদের কোনও ফ্রন্ট বা জোট কি ফ্যাসিবিরোধী সংগ্রামের শক্তি হতে পারে ? এপ্রসঙ্গে অবশ্য বলতেই হবে, সদ্য বিহার নির্বাচনে এই মহাজোটের ‘সাফল্য’(?)-এর পর সিপিআই(এম) নেতা কমঃ অরুণ মিশ্র ‘গণশক্তি’ পত্রিকায় যে প্রবন্ধটি লিখেছেন, সেখানে একবারও এই জোটকে তিনি ‘ফ্যাসিবিরোধী জোট’ বলেননি এবং বিজেপি ও তার কেন্দ্রসরকারকে তিনি চিহ্নিত করেছেন “সাম্প্রদায়িক স্বৈরাচারী শক্তি” হিসাবে, “ফ্যাসিস্ট” হিসাবে নয় (ফ্যাসিস্ট বা ফ্যাসিবাদ শব্দ একবারও তাঁর লেখায় নেই)। সেক্ষেত্রে এই নির্বাচনী ‘মহাগটবন্ধন’-এর উদ্দেশ্য সংসদীয় ক্ষমতার প্রসাদের ভাগ-বাঁটোয়ারা ছাড়া আর কী ?
ফ্যাসিবিরোধী ফ্রন্ট-এর কৌশল সম্পর্কে ডিমিট্রভ থিসিস ও আজকের মহাজোট
অবশ্য ফ্যাসিবিরোধী সংগ্রামের প্রশ্নটির এখানেই ইতি ঘটাতে আমরা পারি না। কারণ প্রধানত এই চরম প্রতিক্রিয়াশীল, শভিনিস্ট ও সাম্রাজ্যবাদী পদক্ষেপগুলির মধ্য দিয়েই নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ফ্যাসিস্ট শক্তি হিসাবে গোটা দেশে শাসনক্ষমতা করায়ত্ত করছে। তাই কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ফ্যাসিবিরোধী ফ্রন্ট গঠনের কৌশল সম্পর্কে কমিন্টার্ন-এ গৃহীত ডিমিট্রভ থিসিসের মূল বক্তব্যগুলি কী ছিল, অতি সংক্ষেপে তার মূল বিষয়বস্তুকে তুলে ধরব আমরা।
ডিমিট্রভ তাঁর থিসিসে দেখান যে ফ্যাসিবাদের উত্থানের প্রধান তিনটি প্রেক্ষিত হল :
১) অর্থনৈতিক সংকটের গোটা বোঝাটাই সাম্রাজ্যবাদী চক্র শ্রমজীবী জনতার ঘাড়ে তুলে দিতে চেষ্টা করে;
২) বুর্জোয়ারা পুরনো কায়দায় তাদের ‘ডিক্টেটরশিপ’ (একাধিপত্য) চালাতে আর সক্ষম নয় (অর্থাৎ, যাকে তারা ‘গণতন্ত্র’-এর আখ্যা দিয়ে থাকে); এবং
৩) ‘সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট’-রা (অর্থাৎ, শ্রমিক আন্দোলন ও কমিউনিস্ট আন্দোলনে সুবিধাবাদী, সমঝোতাবাদী ও স্বজাতিমত্তরা, যারা উচ্চ-বেতনভোগী শ্রমিক শ্রেণীর প্রতিনিধি) শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লবী সংগ্রামকে অথর্ব বানিয়ে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিই ফ্যাসিস্ট শক্তির উত্থানের ভিত্তি প্রস্তুত করে। সেজন্যই ডিমিট্রভ প্রস্তাব করেন, যা ১৯৩৫-এর কমিন্টার্ন-এ সার্বিক স্বীকৃতি পায়, যে, ফ্যাসিবিরোধী সংগ্রামের জন্য যে ‘ইউনাইটেড ফ্রন্ট’ গঠনের কৌশল গ্রহণ করতে হবে, তার তিনটি মূল বিষয়বস্তু (content) অবশ্যই হতে হবে :
১) অর্থনৈতিক সংকটের বোঝা শাসক শ্রেণী তথা বড়লোকেদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে যৌথ সংগ্রাম;
২) সকল প্রকার ফ্যাসিস্ট আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, শ্রমজীবী জনতার অর্জিত অধিকার রক্ষার্থে এবং বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাগুলি অবলুপ্ত করার বিরুদ্ধে যৌথ সংগ্রাম; এবং
৩) আসন্ন সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের বিপদ রুখতে যৌথ সংগ্রাম, এমন সংগ্রাম যা এরকম যুদ্ধের প্রস্তুতিকেই কঠিন করে তোলে।
স্পষ্টতই, এই সকল বিষয়বস্তুর ধারপাশ দিয়েও যাওয়ার চেষ্টা করেনি ‘মহাজোট’-এর এমনকি কোনও বামপন্থী বা কমিউনিস্ট দাবীদার। জোট করবার ক্ষেত্রে এ ধরণের কোনও শর্তও তারা চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করেনি বুর্জোয়া দক্ষিণপন্থী দলগুলোর ওপর। বিপরীতে, বরং বিজেপি সরকার ফ্যাসিস্ট ক্ষমতা অর্জনের পথে শ্রমজীবী জনতার অর্জিত অধিকার কেড়ে নেওয়ার এবং বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক ন্যূনতম স্বাধীনতাগুলোও অবলুপ্ত করার যে-সকল পদক্ষেপ নিয়েছে, তা এদের সমর্থনেই সম্ভব হয়েছে। আর একই সাথে যুদ্ধের পক্ষে এবং যুদ্ধোন্মাদোনা সৃষ্টিতে গলা ফাটিয়েছে এই সব দল। তাদেরকে যুদ্ধবিরোধী অবস্থান নিতে বাধ্য তো করেইনি এই বামপন্থী ও কমিউনিস্ট পার্টিগুলি, উল্টে নিজেরাও যুদ্ধের পক্ষে স্বজাতিমত্ত অবাস্থান নিয়েছে। ফলে ‘মহাগটবন্ধন’ ফ্যাসিবিরোধী ঐক্য না হয়ে এক নিতান্ত সুবিধাবাদী জোট হয়েছে, যার ফলে বিজেপি-আরএসএস-এর নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিবাদ প্রতিদিন তাদের শক্তি আরও বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে, শুধু তাই-ই না, তা তাদের জন্য মসৃণতর হচ্ছে, যাকে বলা যায় “বিরোধিতার সহযোগিতায়”।
বাসুদেব নাগ চৌধুরী পিপ্ল্’স্ ব্রিগেডের আহ্বায়ক