ভোটের উৎসবে যখন গোটা দেশ মগ্ন তখন কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রের একাধিক অংশের আখ চাষীরা ফসলের বকেয়া দাম না পেয়ে ভুখা পেটে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। বিগত ফেব্রুয়ারী মাসেও নাসিক থেকে মুম্বই পর্যন্ত হওয়া ‘কিষাণ লং মার্চ’-এর মধ্যে দিয়ে ফসলের দাম না পাওয়ার প্রতিবাদে কিষাণদের বিক্ষোভের চিত্র ধরা পড়েছিল। তার পরেও আখ চাষীদের বর্তমান অবস্থা এটাই প্রমাণ করে, কৃষকদের আর্থিকভাবে বিন্দুমাত্র উন্নতি তো হয়ই নি বরং পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে উঠেছে। চিনি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি কৃষকদের বকেয়া “ফেয়ার অ্যান্ড রেমুনারেটিভ প্রাইস” বা “এফ.আর.পি” (সুগার মিল দ্বারা আখ চাষীদের প্রদেয় ন্যূনতম নির্ধারিত মূল্য) মেটানোর ইচ্ছা প্রকাশ না করলে ফডণবীশ সরকারকে আবারও কৃষক বিক্ষোভের মুখোমুখি হতে হবে। যদিও বিগত জানুয়ারি মাসে পুণে শহরে সুগার কমিশনারেট-এর অফিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করার ফলে কমিশনার শেখর গায়কোয়ার ৩৯টি চিনি প্রস্তুতকারক সংস্থাকে “রেভিনিউ রিকভারি সার্টিফিকেট” প্রদান করেন কিন্তু ভোট প্রচারের গড্ডলিকা প্রবাহে তা চাপা পড়ে গেছে। এই প্রসঙ্গে কমিশনার গায়কোয়ার সংবাদমাধ্যমগুলিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে গোটা মহারাষ্ট্র জুড়ে চলা ১৯৫টি সুগার মিলের মধ্যে মাত্র ৪৩টি মিলই সম্পূর্ণ মূল্য আখ চাষীদের প্রদান করতে পেরেছে, বাদবাকী মিলগুলির কাছ থেকে ৩৬০৭ কোটি টাকার বিপুল বকেয়া থেকে কৃষকরা এখনও বঞ্চিত। অর্থনৈতিক ও ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে আখ চাষীরা ৮০% এফ.আর.পি প্রথম ও বাদবাকী অংশ দ্বিতীয় কিস্তিতে দেওয়ার ব্যবস্থা করার সরকারি প্রস্তাবে রাজি হলেও পেষণের সময় পেরিয়ে গেলেও সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে কোনোরকম উচ্চবাচ্য করা হয়নি।
এই মুহূর্তে দাড়িয়ে যখন মহারাষ্ট্রের আখ চাষীদের লড়াই চলছে, অন্যদিকে একইভাবে আখ চাষীদের দুর্দশা পরিলক্ষিত হচ্ছে দক্ষিণ কর্ণাটকের মান্ড্যাতেও। চিনি উৎপাদনে বিখ্যাত এই জেলার প্রায় ১০০ জন আখ চাষী পূর্ববর্তী বকেয়া মূল্য না পাওয়ার কারণে ‘এন.এস.এল সুগারস্’ ও চামুন্ডেশ্বরী সুগার মিলের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা ভাবে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই ঘটনা ব্যক্ত করে লাগাতার পাওনা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কথা। চারটি সংস্থা এখানে ব্যবসা করে, যার মধ্যে আছে রাজ্য সরকার পরিচালিত মাইসোর সুগার কোম্পানি লিমিটেড, করোমন্ডল সুগার লিমিটেড, এন.এস.এল প্রাইভেট লিমিটেড এবং চামুন্ডেশ্বরী সুগার লিমিটেড। এই সংস্থাগুলি কৃষকদের থেকে প্রায় ৫৭৩.০৬ কোটি টাকার আখ কিনলেও পরিশোধ করেছে মাত্র ৪৭০.৭১ কোটি টাকা (২২ শে এপ্রিল, ২০১৯-এর সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী)। অর্থাৎ প্রায় ১০২.৩৫ কোটি টাকার বিপুল প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে প্রবল অর্থাভাবে দিন কাটাচ্ছেন আখ চাষীরা।
এই গোটা ভোটের মরশুম জুড়ে বাজারি মিডিয়ার অবহেলার ফলে জনগণ দেশের দুটি রাজ্য জুড়ে চলতে থাকা আখ চাষীদের এই দুর্দশা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন! মহারাষ্ট্রে একদা এন.ডি.এ জোটের অংশীদার “স্বাভিমানী শেতকারী সংগঠন” এবং কর্ণাটকে গান্ধি ও পেরিয়ারের মতাদর্শে প্রভাবিত “কর্ণাটক রাজ্য রাইথা সংঘ” আখ চাষীদের হয়ে গলা তুললেও পরিকল্পনার অভাব ও স্বচ্ছ অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীর অভাবে আন্দোলন দানা বাধাতে সফল হচ্ছে না। চাষীদের মধ্যে নিবিড় সংগঠন তৈরি ও জোরদার আন্দোলনের রাস্তা প্রশস্ত করতে না পারলে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা অসম্ভব।