কুর্দদের বিরুদ্ধে তুরস্কের আগ্রাসন

৮ বছর ধরে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার পর গত ৬ই অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের সেনাবাহিনীকে সিরিয়া থেকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ট্রাম্প আগেই বলেছিল যে সিরিয়ার কুর্দরা তুরস্কের আক্রমণ প্রতিহত করার লড়াই ছেড়ে দিলে তাদের পক্ষে নতুন জোট গঠন করা “সহজ” হবে! এও বলা হয় যে কুর্দরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করেনি, তারা নর্ম্যান্ডিতেও সহায়তা করেনি, তাই তারা নাকি কেবল “তাদের দেশের” জন্য লড়াই করতেই আগ্রহী ছিল। নিজের ধরি মাছ না ছুঁই পানী অবস্থান জিইয়ে রাখতে ট্রাম্প এও বলে রাখে যে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট যদি কোনরকম দুর্ব্যবহার করে, তাহলে তুরস্কের অর্থনীতিকে সে বিলুপ্ত করে দেবে। যদিও এই দুর্ব্যবহারের সংজ্ঞা কি তা উল্লেখ করা হয়নি।  

ট্রাম্পের এহেন সিদ্ধান্তের পরেই তুরস্ক এবং সিরিয়ার সেনাবাহিনী সিরিয়ার উত্তর পূর্ব অংশ, যেটা প্রধানত কুর্দদের দখলে ছিল, সেখানে আক্রমন করতে শুরু করেছে। তুর্কি সশস্ত্র বাহিনী এবং সিরিয়ান জাতীয় সেনাবাহিনী ”অপারেশন পিস স্প্রিং”-এর অংশ হিসাবে ফোরাত নদীর পূর্ব দিকে স্থলপথে আক্রমণ শুরু করেছে। তুরস্কের গণমাধ্যম চারটি পয়েন্টে সেনা প্রবেশের কথা জানিয়েছে, এর মধ্যে দুটি সিরিয়ার শহর ‘তেল আব্যাদ’ এবং দুটি পূর্ব দিকে ‘রস আল এইন’-এর কাছাকাছি। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম এবং পোল্যান্ড তুরস্ককে এই আক্রমণ বন্ধ করার প্রতীকী দাবী করায় স্বাভাবিকভাবেই কোন লাভ হয়নি। কুর্দ-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) এই আক্রমণের প্রতিরোধ করতে অসফল হলে হাজার হাজার মানুষ রাস আল আইন থেকে হাসাকা প্রদেশের দিকে পালিয়ে যেতে শুরু করেছে। এসডিএফ জানিয়েছে, তুর্কি বিমান হামলায় অন্তত পাঁচজন সাধারণ মানুষ এবং তিনজন যোদ্ধা নিহত হয়েছে এবং কয়েক ডজন সাধারন মানুষ আহত হয়েছে। 

কুর্দরা একটি ইরানি জাতি গোষ্ঠী। প্রধানত দক্ষিণপূর্ব তুরস্ক, উত্তর পশ্চিম ইরান, উত্তর ইরাক এবং উত্তর সিরিয়ার মধ্যে এদের বসতি রয়েছে। এছাড়াও পশ্চিম তুরস্কের শহরগুলিতে, প্রধানত ইস্তানবুলে এবং পশ্চিম ইউরোপে, বিশেষত জার্মানিতে কুর্দ উপজাতিদের বসতি রয়েছে। বর্তমানে গোটা পৃথিবী জুড়ে মোট ৩ থেকে ৪.৫ কোটি কুর্দরা আছে। কুর্দরা কুর্দি ভাষা এবং জাজা-গোরানী ভাষাগুলি ব্যবহার করে, যা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের পশ্চিম ইরানি শাখার অন্তর্ভুক্ত। তাদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে, যা বিভিন্ন উপভাষায় বিভক্ত এবং আরবি বা তুর্কি ভাষার সাথে সম্পর্কিত নয়। সবচেয়ে বেশি কথিত উপভাষার মধ্যে হ’ল কুরমঞ্চি। কুর্দিদের সিংহভাগই মুসলমান, প্রায় ৭৫% সুন্নি এবং ১৫% আলেভাইট।

কুর্দদের প্রভাব ক্ষেত্র

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পরে, ১৯২০ সালের সেভরেস চুক্তিতে একটি কুর্দি রাষ্ট্রের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যাই হোক, এই প্রতিশ্রুতি তিন বছর পরে বাতিল হয়ে যায়। যখন লসান চুক্তিটি আধুনিক তুরস্কের সীমানা নির্ধারণ করে, কুর্দদেরকে নিজ নিজ দেশে সংখ্যালঘু মর্যাদায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতি তুরস্ক, ইরান এবং সিরিয়াতে চলমান সশস্ত্র গেরিলা সংঘাত ও বিদ্রোহের দিকে পরিচালিত করেছে। ইরাকে কুর্দদের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল রয়েছে যার নাম কুর্দিস্তান। কল্পিত কুর্দিস্তানের বেশিরভাগ অংশ তুরস্ক, ইরান, ইরাক এবং সিরিয়ার মধ্যে বিভক্ত এবং ককেশাসের প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলিতে ছোট ছোট ছিটমহলগুলিও রয়েছে। কুর্দিস্তানকে বিভক্তকারী সীমানা সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ অনুসারে কুর্দ জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে টানা হয়েছিল। এই সীমানাগুলি গ্রাম, শহর এমনকি পরিবারকে বিভক্ত করেছে। এ ছাড়া সময়ে সময়ে কুর্দ-অধ্যুষিত অঞ্চলে কুর্দি পোশাক, লোককাহিনীর প্রচার এবং নাম ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। “কুর্দিস” বা “কুর্দিস্তান” শব্দটি তুর্কি সরকার কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধও করা হয়েছিল। ১৯৮০ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পরে কুর্দি ভাষা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। যারা কুর্দি ভাষায় কথা বলত বা গান গাইত, তাদের গ্রেপ্তার করে কারাবন্দী করা হয়। তুরস্ক কুর্দি সংখ্যালঘুদের ওপর ভাষাগত, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস করেছিল।

এর বিরুদ্ধে ১৯৭৮ সালে আবদুল্লাহ ওকালান-এর নেতৃত্বে কুর্দ শিক্ষার্থীরা ফিস গ্রামে ওয়ার্কার্স পার্টি অফ কুর্দিস্তান (পিকেকে) প্রতিষ্ঠা করে এবং ১৯৭৯ সালে জনসমক্ষে আসে। পিকেকের আদর্শ শুরুর দিকে মূলত সমাজতন্ত্র এবং কুর্দি জাতীয়তাবাদের একটি মিশ্রণ ছিল। তারা একটি স্বাধীন কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের ভিত্তি চেয়েছিল, যা কুর্দিস্তান হিসাবে পরিচিত ছিল। এর জন্য পিকেকে প্রাথমিকভাবে যে কারণ দিয়েছিল তা হল তুরস্কের কুর্দদের উপর অত্যাচার এবং তৎকালিন সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন। পরবর্তীকালে তারা মার্ক্সবাদী মতাদর্শকে বর্জন করে এবং নৈরাজ্যবাদের আশ্রয় নেয়। বর্তমান জিনিয়ালজি, লিবার্টেরিয়ান সোশ্যালিজম এবং ডেমোক্র্যাটিক কনফেডারালিজম-এর আদর্শ নৈরাজ্যবাদেরই একটি প্রায়োগিক ধারা। সিরিয়াতে কুর্দদের একটা মহিলাদের দল রয়েছে যা ওয়াইপিজি নামে পরিচিত। এরা এসডিএফ-এর প্রধান অংশ এবং পিকেকে দ্বারা প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত। 

পরবর্তীকালে ১৯৮৪ সালে পিকেকে তুরস্ক, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন এবং ফ্রান্সের প্রশিক্ষণ শিবির ব্যবহার করে একটি আধাসামরিক দলে পরিণত হয়। একই সময়ে, এর কিছু সদস্য প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের সেই সদস্যদের থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে যারা লেবাননের বেকা উপত্যকায় একসময়ে সোভিয়েত কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী প্রতিবেদন অনুসারে, পিকেকে একসময়ে সিরিয়ার উল্লেখযোগ্য সমর্থন পেয়েছিল এবং ইরান, ইরাক এবং লিবিয়ায় নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে পেরেছিল।

তুরস্ক সরকার কুর্দদের পার্টি অর্থাৎ পিকেকে-কে একটি জঙ্গি সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করে। ১৯৯৯ সালে পিকেকে নেতা আবদুল্লাহ ওকালানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তুর্কি সরকার হাজার হাজার তুর্কের মৃত্যুর জন্য দায়ী ওকালানকে একজন রক্তাক্ত সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। এটা সত্য যে কুর্দদের বিরুদ্ধে ১৫ বছরের যুদ্ধে অনেক তুরস্কের সেনা এবং নাগরিক মারা গেছে তবে একই সাথে দক্ষিণ পূর্ব তুরস্কে তুর্কি সেনাবাহিনীর অভিযানের ফলে হাজার হাজার কুর্দিও মারা গেছে।    

সিরিয়ার প্রধান কুর্দ গোষ্ঠী, ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন পার্টি (পিওয়াইডি) প্রথম দিকে উত্তরাঞ্চলে আধিপত্য স্থাপন করতে শুরু করে যেহেতু সরকারী বাহিনী বিরোধীদের বিদ্রোহকে দমন করার চেষ্টা করছিল। প্রথম দিকে, তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রায় তিন মিলিয়ন কুর্দদের বাড়িতে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। কুর্দ-নেতৃত্বাধীন গভর্নিং বডি স্থাপন করা হয়েছিল। ওয়াইপিজির প্রভাবের ক্ষেত্রটি প্রসারিত হয় যখন ওয়াইপিজি মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সাথে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)-এর প্রধান হয়ে ওঠে। এসডিএফের প্রভাব মনবিজ ও রাক্কায় প্রসারিত হওয়ায় উভয় ক্ষেত্রে আইএস পরাজিত হয়েছিল। বর্তমানে তাদের বাহিনী ডিয়ার আল-জোরেও পৌঁছে গেছে, যেখানে এসডিএফ এখনও আইএসের সাথে লড়াই করছে। কুর্দ নেতাদের বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে তাদের লক্ষ্য স্বাধীনতা নয়, বিকেন্দ্রীভূত সিরিয়ার অভ্যন্তরে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন। সিরিয়ার সরকারের সাথে সম্পর্ক ভালো না হলেও সাধারণ শত্রুদের বিরুদ্ধে, বিশেষত আলেপ্পোর আশেপাশে, তাদের পরস্পরকে সহযোগিতা করতে দেখা গেছে। ওয়াইপিজি সিরিয়ার সরকারী বাহিনীকে তার অঞ্চলগুলিতে পা রাখার অনুমতি দিয়েছে। তবে সিরিয়া সরকার কুর্দদের স্বায়ত্তশাসনের দাবির বিরোধিতা করে আসছে। গত বছর উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার কোনও অগ্রগতি হয়নি। নেত্রীস্থানীয় কুর্দ রাজনীতিবিদ ইলহাম আহমেদ বলেছেন যে কুর্দ-নেতৃত্বাধীন কর্তৃপক্ষ “বিকেন্দ্রীভূত সিরিয়ার কাঠামোর মধ্যেই রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানোর জন্য সরকারকে চাপ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি নতুন উদ্যোগ শুরু করছে”। বিশ্লেষকরা এক্ষেত্রে বলছেন যে ট্রাম্পের ঘোষণায় কুর্দদের আলোচনার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ছে। 

কুর্দদের সাথে মার্কিনীদের সুবিধাবাদী মৈত্রী

যদিও উগ্র জঙ্গী বিদ্রোহীরা সিরিয়ার অনেকাংশে সরকার ও মিত্রদের দ্বারা পরাজিত হয়েছে, তবু এখনও ইদলিব থেকে আফরিন হয়ে জারাব্লাস পর্যন্ত উত্তর-পশ্চিমে তাদের ক্ষমতা রয়েছে। এই অঞ্চলে আবার তুরস্কের সেনা রয়েছে। বিদ্রোহীদের মধ্যে তুরস্ক সমর্থিত স্বাধীন সিরিয়ান আর্মি গ্রুপ এবং জিহাদিরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে আসাদ বরাবর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা তুরস্কের হাত থেকে সিরিয়ার প্রতি ইঞ্চি পুনরুদ্ধার করবে। 

ট্রাম্প ঘোষণা করেছে যে সম্পূর্ণ সেনা তারা প্রত্যাহার করবে না। অন্ততপক্ষে ৪০০টি গ্রুপ রেখে দেবে। এরকম কাজ মার্কিনীরা এর আগেও করেছে। তারা এর আগেও সিরিয়াতে ছিল। ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা-র নির্দেশে আল-কায়েদা ধ্বংসের পরে সেখান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার না হয়া পর্যন্ত ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া বা আইএসআইএস তেমন ক্ষমতাশালী ছিল না। কেবল মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ, ইরাকের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং ইরাকি সেনাবাহিনীর পতনকে ভিত্তি করে জেহাদিরা সিরিয়া ও ইরাক জুড়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে পুনরায় আত্মপ্রকাশ করে। এর ফলে একই সাথে সিরিয়ার অর্থনীতি অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়। ২০১৪ সালের জুনে ওবামার সেনা প্রত্যাহারের মতো, সিরিয়া থেকে ট্রাম্পের আকস্মিক এবং রাজনৈতিক মীমাংসাবিহীন প্রত্যাহারও এই উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীকে পুনরায় উদ্দীপনার সুযোগ দিতে পারে এবং নিজেদেরকে পুনরুদ্ধার করতে পারে। নতুন কোনও জেহাদি গ্রুপের উত্থানের সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না কারণ এই জেহাদিদের রাজনৈতিক উত্থান মার্কিন সুবিধাবাদের প্রতিক্রিয়াতেই হয়ে থাকে।

সাম্প্রতিক ট্রাম্প একটি বিবৃতি জারি করেছে যে তুরস্ক “উত্তর সিরিয়ায় দীর্ঘ পরিকল্পনাযুক্ত অভিযান চালিয়ে এগিয়ে যাবে” এবং মার্কিন সেনাবাহিনী “আশেপাশের অঞ্চলে আর থাকবে না”। এই বক্তব্যের বাস্তব ফলাফল সুস্পষ্ট: কুর্দ অঞ্চলে আক্রমণ চালানো এবং তুর্কি আধিপত্য বিস্তার। ট্রাম্প বলেছে যে সে মধ্য প্রাচ্যে “অন্তহীন যুদ্ধ” থেকে সরে আসার একটি প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে। সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা কমাবে। তদুপরি, ইয়েমেনের হাউথিস সৌদি আরবের সাথে শান্তি আলোচনা শুরু করেছে। এই সমস্ত অগ্রগতি মধ্য প্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি সহজ করতে পারে। 

৭ই অক্টোবর, মার্কিন অপরিশোধিত তেলের সক্রিয় ‘ফিউচার’ (তেল কেনার সূচক) ০.১ শতাংশ কমে এবং ব্যারেল প্রতি ৫২.৭৫ ডলার হয়ে যায়। সেই সপ্তাহের শেষে, সক্রিয় অশোধিত তেল ফিউচারগুলি ২.৪% হ্রাস পায়, যা চেসাপেক এনার্জি (সিএইচকে)-এর মতো ঊর্ধ্বগামী শেয়ার বাজারের স্টকগুলিতে ৫.৭% হ্রাস ঘটায়। ওই একই দিনে আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটস (হেলিমা ক্রফট) সিএনবিসিকে জানায় যে অর্থনৈতিক উদ্বেগ তেলের দামের উপর বেশি প্রভাব ফেলছে। এটা অবশ্যই একটা পরোক্ষ কারন হতে পারে সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পিছনে। এর ফলে মার্কিনীদের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক ভালো হবে এবং পুনরায় ইরানের সাথে কথা বার্তা শুরু হবে, যার ফলে তেলের দামটা কমতে পারে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি এমনই যে ট্রাম্প যদি ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞার অবসানও ঘটায়, এমনকি ইউএস-ইরান আলোচনা শুরুও হয়, তার পরেও তেলের দাম অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তেলের দাম যদি ৫০ ডলারের নীচে নেমে যায়, তবে সমস্যা হতে পারে। আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট (এপিআই) ইনভেন্টরি তথ্য অনুযায়ী, তেল কোম্পানিগুলির ৫.৯ মিলিয়ন ব্যারেল এখনও পড়ে রয়েছে। মার্কিনীরা সরে জোয়ার পর থেকেই তুরস্ক সিরিয়ার কুর্দদের ওপর বোমা বর্ষণ শুরু করেছে অর্থাৎ একটা যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে শেয়ার মার্কেটও প্রভাবিত হয়েছে। 

যে ছবিটা হারিয়ে যেতে চলেছে

৮ বছর যুদ্ধ জিইয়ে রেখে হঠাৎ মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের মুখে আইসিস নেতা বাগদাদীর হত্যা সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের মুখোশ কিছুটা ঢিলে করে দিয়েছে; বিশেষ করে এটা তো জানাই যে মার্কিন বাহিনী যুদ্ধের শুরুতে বিদ্রোহী এবং জেহাদি উভয় বাহিনীতেই যোগদান করেছিল! একই সাথে, কুর্দদের সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে হাত মেলানোর ফল ভুগতানোর মধ্যে দিয়ে নিজেদের আদর্শকে পুনঃবিবেচনা করা উচিৎ। প্রশংসিত রোজাভা অ্যাডমিনিস্ট্রেশান আজ ধ্বংসের মুখে। এর আগে সাদ্দাম হুসেনের প্রতি নরম মনোভাব দেখিয়েও তাদের প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়েছে। এমতাবস্থায় প্রশ্ন দুটো, কুর্দরা কোনদিক বেছে নেবেঃ জাতিসত্তার আন্দোলন না সন্ত্রাস আশ্রিত বিচ্ছিন্নতাবাদ? নৈরাজ্যবাদ না মার্ক্সবাদ? 

Similar Posts

1 Comment

  1. সমৃদ্ধ হলাম।ভালো লেখা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *