কনভয় ছুটিয়ে চলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, আর পাশ থেকে ‘জয় শ্রী রাম’ বলে শ্লোগান দিচ্ছেন কিছু বিজেপি কর্মী সমর্থক। চটে লাল মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাকে নাকি গালাগাল দিয়েছেন বিজেপি সমর্থকরা, এই অভিযোগে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তিনি শাসাতে লাগলেন শ্লোগান দেওয়া বিজেপি কর্মী সমর্থকদের। রাজ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এমন ঘটনা ঘটালেন তৃণমূল-সুপ্রিমো। এর পরেই নৈহাটির সভায় গিয়ে তিনি ‘জয় শ্রী রাম’-এর পাল্টা ‘জয়-হিন্দ’ শ্লোগান দিতে বলেন তৃণমূল নেতা-কর্মীদের, এবং অবশেষে গতকাল তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী ঘোষণা করলেন আর.এস.এস ও বিজেপিকে রুখতে তাদের পাল্টা ‘জয়-হিন্দ বাহিনী’ এবং ‘দুর্গা-বাহিনী’-কে রুখতে তৃণমূল ‘বঙ্গ-জননী বাহিনী’ তৈরি করবে।
‘জয়-হিন্দ’ বাহিনীর প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নৈহাটির সভাতেই, যেখানে সুকৌশলে বাঙালী আবেগ উস্কে দিয়ে নেতাজীর কথা টেনে আর.এস.এসের মোকাবিলা করতে তিনি জয়হিন্দ ধ্বনি দেবার দাওয়াই দিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মীদের। অথচ এই আর.এস.এস-কেই তিনি একসময় ‘দেশপ্রেমী’ সংগঠন বলে এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন, তখন তিনি অটল-মন্ত্রীসভায় ক্যাবিনেট মন্ত্রী! ‘জয়হিন্দ বাহিনী’-র এই পরিকল্পনার পিছনে তৃণমূলের পিঠ বাঁচানোর কৌশল রাজনৈতিক মহল দেখলেও এর পিছনে গভীর রাজনৈতিক পরিকল্পনা রয়েছে তৃণমূল নেত্রীর, যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি এক ঢিলে বাঙালী আবেগ এবং সংখ্যালঘু আবেগ দুই পাখিই শিকার করতে চাইছেন।
অন্যদিকে ভোটের ফল প্রকাশের পর সংখ্যালঘু তোষণ নিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “যে গরু দুধ দেয় তার লাথি খাওয়াও ভালো” অর্থাৎ ঘুরপথে সংখ্যালঘুদের ভোটের গরু ছাগোলে পরিণত করলেন তিনি। এবার এই দুই বাহিনী গঠনের মাধ্যমে আরো বেশী বেশী করে আইডেন্টিটি পলিটিক্স, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও হানাহানির পথ প্রশস্ত করার দিকেই তিনি এগোচ্ছেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার অবস্থা তথৈবচ, অগ্নিগর্ভ ভাটপারা ছাড়াও জায়গায় জায়গায় বিজেপি-তৃণমূলের খুনোখুনি অব্যাহত। এর আগে ধূলাগড়, বসিরহাট, আসানসোলের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছিল, আর এবার সম্মুখ সমরে নামতে চলেছে দুই দলের স্বীকৃত ‘একশন ফোর্স’। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কাল থেকেই দু-দলের কার্যকলাপ দেখে বাংলার মানুষের চোখে ছানি পড়ার জোগাড়। আর ফলাফল বের হবার পরে একের পর এক তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ‘পদ্মশিবিরে’ গমন দিনের আলোর মত স্পষ্ট করে দিচ্ছে দুই দলের আসল চরিত্র। এখন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার লড়াইতে আরো কত মানুষ বলি হতে চলেছেন বিধানসভা নির্বাচন অবধি, তাই-ই এখন বাংলার মানুষের কাছে উদ্বেগের বিষয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *