প্রতিদিন বিভিন্ন খবরের কাগজের পাতায় ইউ.এস-ইরান সামরিক স্নায়ুযুদ্ধের খবরে পাঠকরা ধাতস্থ হয়ে গিয়েছে। এখন আবার সে দেশের ধর্মীয় সরকারের গোঁড়ামি এবং মহিলা ও শিশুদের দুরাবস্থার কাহিনীও প্রতিবেদন হিসেবে প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে। সাংবাদিক হত্যা ও ইয়েমেনে মানবতার সংকটের খলনায়ক সৌদি আরব, সিরিয়া ও লিবিয়াতে গৃহযুদ্ধের জনক ইউ.এস এবং প্যালেস্তাইনের উপর আক্রমণের জন্য দায়ী ইজরাইলের বিরুদ্ধে যে সংবাদমাধ্যম চুপ, তাদেরই চোখে এহেন কুম্ভিরাশ্রু বুঝিয়ে দিচ্ছে যে ইরানের ধর্মীয় সংকীর্ণতার অভিযোগ এনে আসলে ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনকেই শিলমোহর দেওয়া হচ্ছে।
ইরানের উপর মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা নতুন নয়। ১৯৭৯-এর ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে আজ অবধি ইউ.এস-এর এই আগ্রাসী নীতি অক্ষুণ্ণ রয়েছে। ২০১৩ সালে হাসান রুহানি ইরানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই ইউ.এস-এর মধ্য প্রাচ্য দখলের রাজনীতি নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের উপর যেভাবে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারির মাধ্যমে ছায়া যুদ্ধ চালাতে শুরু করেছেন তা যে সাম্রাজ্যবাদী আস্ফালনেরই বহিঃপ্রকাশ তা বলার অপেখ্যা রাখে না। ইরানের ভৌগোলিক অবস্থানের জন্যই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি দেশটির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। ইরানের তৈল নিষ্কাশনকারী কোম্পানিগুলিকে দখল করার প্রবণতাও বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতির আরেক কারণ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন অক্ষ শক্তির সঙ্গে মিত্রতা রাখার দরুণ ইরানের শাহেনশাহকে ক্ষমতাচ্যুত করে ব্রিটিশ ও সোভিয়েত সৈন্যরা। পরবর্তী এবং সর্বশেষ শাহ হন মহম্মদ রেজা পেহলবী। রেজা শাহ প্রথম থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলতেন। রাজতন্ত্রের অবসানের প্রথম প্রচেষ্টা করেন মহম্মদ মোসাদ্দেঘ। মোসাদ্দেঘের নেতৃত্বাধীন সরকার অ্যাংলো-ইরানীয় তৈল কোম্পানি জাতীয়করণ এবং বিদেশী টেকনিশিয়ানদের অয়েল রিফাইনারিগুলি থেকে বিতাড়িত করলে ব্রিটেন বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ইরানের তেল রপ্তানিতে বড়সড় ধাক্কা মারে। ইরানের অর্থনৈতিক ইতিহাসে এই অধ্যায় ‘আবাদান সংকট’ হিসেবে খ্যাত। এই অর্থনৈতিক সংকটের পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট মতাবলম্বী তুদেহ পার্টির উত্থানের সম্ভাবনা দর্শে মার্কিন সংস্থা সি.আই.এ-এর মদতে অপারেশান অ্যাজ্যাক্স-এর মাধ্যমে মোসাদ্দেঘকে সরিয়ে ইরানের ক্ষমতায় ফিরে আসেন শাহ। এই সময় থেকেই ইরানের বাজার পূর্ণরূপে দখল করতে সচেষ্ট হয় মার্কিনীরা। ইরানি তেল কোম্পানিগুলোর যৌথ মালিকানায় অধিষ্ঠিত হয় একাধিক মার্কিন সংস্থা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ইউরেনিয়াম প্রাচুর্যতাকে কাজে লাগিয়ে দেশটিকে পারমাণবিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে। অর্থাৎ মার্কিনীদের হাতেই শুরু হয়েছিল ইরানের পারমাণবিক রণসজ্জা। ফলে, আজ তাদের পুতুল সরকার অধিষ্ঠিত না থাকাতেই যে মার্কিনীরা ইরানের বর্তমান পারমাণবিক রণকৌশলে এত বিরক্ত তা বলাই বাহুল্য। ১৯৫৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সাথে সরাসরি বাণিজ্যের পন্থা অবলম্বন করে মূলত তেল কোম্পানি এবং নিউক্লিয়ার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে। এর ফলে মার্কিন তৈল ভিত্তিক রাজস্ব আদায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও ইরানে ধ্বংস হয়ে যায় সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতির স্বপ্ন। বিলাসিতা রাজ পরিবার ও তার অনুচরদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। এই প্রেক্ষাপটে ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লব সংগঠিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে রেজা শাহ-এর শাসনের পতন হয় এবং আয়াতোল্লাহ খমেইনির নেতৃত্বাধীন ইরানীয় প্রশাসন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অবস্থান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা শুরু করে। তেল কোম্পানিগুলির পুনঃজাতীয়করণ করা শুরু হয়। ধর্মীয় প্রসাশনের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ একটি ছাত্র সংগঠনের দ্বারা ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের কিছু কর্মচারীকে বন্দি করা হয় এবং সেই থেকেই দুই দেশের কৌশলগত কথোপকথনের অভাব এবং সম্পর্কের অবনতি বৃদ্ধি পেতে থাকে। রেগান প্রশাসন থেকে শুরু করে ওবামার আমল-এই দীর্ঘ সময় জুড়েই মার্কিনীরা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপাতে থাকে ইরানের উপর। সুইৎজারল্যান্ড এবং পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় কূটনৈতিক কথোপকথন চলতে থাকে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে। ১৯৯৫ সালে বাণিজ্যিক লেনদেন স্থগিত রাখার মার্কিন অবস্থান আজও কার্যকর রয়েছে।

২০১৫ সালে ইরানের
ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক শক্তি বৃদ্ধির উপর আঘাত হানতে তৎকালীন মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ব্যারাক ওবামা সহ আরো ছয়টি আন্তর্জাতিক শক্তি (ফ্রান্স,
জার্মানি, রাশিয়া, ইউ.কে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন) ইরানের
সাথে “জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন” (জ্যাকপোয়া) চুক্তিপত্রে
সঙ্গবদ্ধ হয়। এই চুক্তিতে বাণিজ্যিক লেনদেন পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরিবর্তে ইরানকে সর্বোচ্চ
৩.৬৭% ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্টকে কাজে
লাগিয়ে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয় এবং পারমাণবিক
অস্ত্র তৈরীতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তাছাড়া, ইরানকে ৩০০ কেজির বেশি ইউরেনিয়াম সঞ্চয়
করা থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়। এই চুক্তির ভিত্তিতে সর্বসম্মোতিক্রমে উক্ত নিয়মাবলী
মেনে চলা সুনির্দিষ্ট করতে একটি আন্তর্জাতিক তদারকি সংস্থাও গঠন করা হয়- ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সি। কিন্তু
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই চুক্তি উল্লঙ্ঘন করে বাণিজ্যিক
এম্বার্গো বজায় রেখে চলছিলেন এবং ২০১৮ সালে ইরানের উপর তথ্য কারচুপির অজুহাত দিয়ে
এই চুক্তি প্রত্যাহার করেন ও ইরানের উপর সমস্ত রকম অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি
করেন। ইরানের প্রশাসনও সরাসরি এই নীতির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কার্যকলাপের সিদ্ধান্ত
নেয়। ২০১৯-এর জুলাই মাসে প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ইরানের
ডেপুটি বিদেশ মন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেন, “ইরান চুক্তি মেনে চলতেই চাইছিল কিন্তু ইউরোপিয়ান
দেশগুলির নিজেদের কথা না রাখাই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী” (Iran still
wanted to salvage the deal but blamed european countries for failing to live up
their own commitments)।
ইরান সরাসরি এই চুক্তির বিরোধিতার পথে নামবে বলে ঘোষণা করে এবং তারা
ইউরেনিয়াম উত্তোলনের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে অগ্রসর হবে বলে জানায়।
জ্যাকপোয়া চুক্তির অন্তর্গত আরো ছয়জন শরীককে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানিয়ে তাদের ৬০
দিন সময় সীমা দেওয়া হয়। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে তেহরানের
নিউক্লিয়ার গবেষণার কারণে ২০% ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্টের অভিযোগ
আনে। অবশ্য পারমাণবিক শক্তি সংস্থার এক মুখপাত্র বেহরুজ কামালবন্দী বলেছেন, “এখন
আমাদের তেহরানের নিউক্লিয়ার রিয়াক্টারের জন্য ইউরেনিয়াম উত্তোলনের প্রয়োজন নেই” (Right
now, we don’t need to enrich uranium for the Tehran reactor)।
বর্তমানে এই বিষয়টি জ্যাকপোয়া-র তদারকি সংস্থার অধীনে রয়েছে। ইউরোপিয়ান দেশগুলি নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি বজায় রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারই মাঝে ইজরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানয়াহু ইরানকে এর ফল ভালো না হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ইরান ৬০ দিন অন্তর ইউরেনিয়াম নিষ্কাশনের হার বাড়াতে থাকবে বলে হুমকি দিয়েছে। ইরানীয় হ্যাকার সংস্থাগুলিও ইউ.এস আক্রমণের হুমকি দিয়ে রেখেছে। সাম্প্রতিক ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন যে উপসাগরীয় এলাকায় হরমুজ প্রণালীতে তিনটি ইরানিয়ান জাহাজ মিলে একটি ব্রিটিশ তেল ট্যাংকারের পথ অবরোধ করেছিল কিন্তু দুটি ব্রিটিশ যুদ্ধ জাহাজ তাদের দিকে অগ্রসর হলে এই অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তেহরানের তরফে তাদের বিদেশ মন্ত্রী জাভেদ জারিফ অবশ্য একে “সম্পূর্ণ ভুয়ো খবর” হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এর প্রতিআক্রমণ হিসেবে ব্রিটেন একটি ইরানীয় তেল ট্যাংকারকে জিব্রল্টার সৈকতের কাছে আটকে রেখেছে। অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের উপর চাপিয়ে দেওয়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে এক পাও পিছু হটতে রাজি নয়। শুধু তাই নয়, তারা সম্প্রতি ওমানে তাদের দুটি পণ্যবাহী জাহাজ আক্রমণের অভিযোগ এনেছে ইরানের বিরুদ্ধে। ইরানের বাণিজ্যিক উৎস্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি মার্কিন আক্রমনের শিকার হয়েছে পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি-গুলি, যেগুলি মূলত ‘ইসলামিক রেভলিউশানারি গার্ড কর্প্স’ দ্বারা পরিচালিত। বলা বাহুল্য, ইরানের মোট বার্ষিক রাজস্বের সর্বোচ্চ শতাংশ আসে এইসব পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিগুলি থেকেই।

ইরানের উপর
আমেরিকার এই আগ্রাসন নীতির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ইরানের সাধারণ মানুষ। বর্তমানে তাঁদের একরকম অর্থনৈতিকভাবে একঘরে করে
দেওয়া হয়েছে। একদিকে যেমন বিদেশ থেকে আসা ওষুধ ইরানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে মার্কিন
প্রশাসন তেমনই তার সাথে সমম্তরালে বেড়ে চলেছে রোগের প্রাদুর্ভাব। ইরানের এক
প্রতিনিধি মাজিদ তাখৎ রাভাঞ্চি নিউ ইয়র্কে জাতিপুঞ্জে বলেছেন, “স্যাংকশানগুলি তৈরিই করা হয়েছে মূলত সাধারণ মানুষকে আঘাত করার
জন্য, বিশেষ করে মহিলা, শিশু, বয়স্ক এবং রোগীদের… অর্থবানের থেকে গরীবকে বেশি
আঘাত করতে, রুগ্নকে স্বাস্থ্যবানের থেকে বেশি, এবং বয়স্কদের থেকে বেশি শিশুদের” (The
sanction are basically designed to harm the general public, particularly the
vulnerable people like women, children, elders and patients… to harm the poor
man than the rich, the ill more than the healthy, and children more than the
adults)। শুধু তাই নয়, ইরানের বাজারে কমদামি দ্রব্যগুলোর
মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে প্রায় ১৭%! ইরানের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাজিহার আসেমি বলেছেন, “মানুষ যেখান থেকে সম্ভব,
যা লব্ধ তাই-ই কিনতে চাইছেন” (people want to buy anything, from anywhere)। তাঁরা এই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে অর্থনৈতিক
যুদ্ধ হিসেবেই দেখছেন। শুধু এখানেই থেমে থাকেনি ট্রাম্প প্রশাসন।
ইরানের চুক্তি উল্লঙ্ঘনের দাবির প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশকিছু এয়ার
ক্রাফ্টস পাঠান ইরানে, যার নাম “আব্রাহাম লিংকন”।
সাম্প্রতিককালে ইরান তাদের রাজধানী তেহরানের আকাশে কিছু মার্কিন ড্রোনকে নিষ্ক্রিয় করে এবং জানায় যে ড্রোনগুলি ১৫০-রও বেশি সাধারণ মানুষকে হত্যা করার জন্য পাঠানো হয়েছিল।
হরমুজ প্রণালীতে একটি মার্কিন তেল ট্যাংকার বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় তারা।
বর্তমানে ডলার-পাউন্ড-ইউরো-ইয়েন মিলিয়ে ডেরিভেটিভ বাণিজ্যের নোশনাল অ্যামাউন্ট এদের মোট জিডিপি-র ৫৪২%, যার ম্যাচিউরিটির সময়ের মধ্যে দাম ও শ্রমের ভারসাম্য না আনা গেলেই আবার আসতে চলেছে অর্থনৈতিক মন্দা। ফলে, যুদ্ধ ছাড়া এত দ্রুত মুনাফার ভারসাম্য সম্ভব নয়। তৃতীয় স্থানে যুদ্ধ পরিচালনার স্ট্র্যাটেজি হিসেবে এই নয়াউদারবাদী যুগে পুঁজির আন্তর্জাতিক চরিত্রের কারণে কোনও একটি নির্দিষ্ট জাতির স্বজাতিমত্ততাকে উৎসাহিত করার বদলে কোনও একটি বিশ্বব্যাপী নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে খাটো করার পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। নব্বইয়ের দশক থেকেই গোটা পৃথিবী জুড়ে একটা বিশেষ ধর্মের প্রতি পৃথিবীবাসীর ঘৃণার পরিমণ্ডল সৃষ্টি করেছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি যার ফলে বিশ্ব জুড়ে একটি নতুন শব্দের আমদানি হয়েছে- “ইসলামিক মৌলবাদ”। এই প্রকোপ থেকে বাদ পড়েনি ইরানও।
একই সাথে ইরানে বিদেশী বুদ্ধিজীবীদের আটক এবং মহিলাদের হিজাব বিরোধী আন্দোলন সেখানকার ধর্মীয় সরকারের অসহিষ্ণুতাকে চিত্রিত করছে। ইরানের কমিউনিস্ট পার্টির নেত্রী নাসরীন জাযায়েরীর কলম থেকে জানা যাচ্ছে যে শ্রমিক আন্দোলন ও কুর্দদের সংগ্রামকে আয়াতোল্লারা ফেতনা বা ইসলামী ঐক্য (উম্মা)-কে বিভক্ত করার চক্রান্ত হিসেবে দেখে। তিনি আরও লিখেছেন যে ইরানের আলি শরিয়তি মার্ক্সবাদের মোকাবিলায় সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কিন্তু ইসলামী ‘সমন্বয়বাদী’ তত্ত্বের উদ্রেক ঘটিয়ে শোষক ও শোষিতের সংঘর্ষকে স্তিমিত করার চেষ্টা করেছেন। ফলে, ইরানের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টির চক্রান্তের বিরোধিতার সাথে সাথে দেশটির অভ্যন্তরেও শ্রমিক আন্দোলন জোরদার করার মধ্যে দিয়ে মেহনতি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার পথে এগোতে হবে।