হিরোশিমা আর নাগাসাকি নিয়ে একটা পত্রিকায় লেখার কথা মাথায় নিয়ে সিলিং ফ্যানের তলা ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে এলাম ।বাঁদিক দিয়ে যেতে যেতে দেখলাম পেট্রল পাম্পের মাথার ওপর মেঘে ফাটল ধরেছে ।এদিকটা বাসের চাকার গন্ধে পাখিরা বিশেষ আসে না ।একটা বাম বিক্রেতা সাইকেল চড়ে ক্যাসেটে বিজ্ঞাপন চালিয়ে দিয়েছে ।ছোটো বড়ো প্রচুর লোক কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে ।যন্ত্রণার সময় এই বাম নাকি ঈশ্বরের মত কাজ করে ।কিন্তু বাম বিক্রেতা আর ঈশ্বর কি এক হলো নাকি !সূর্যমুখী রঙের চুড়িদার পরে ফোনে কথা বলতে বলতে হেঁটে যাচ্ছে কেউ কেউ হিরোশিমা থেকে অনেক দূরে ফুটপাথে ।বাজার থেকে বিক্রি না হওয়ার বাড়তি মাল নিয়ে নিয়ে সবজিওলা খাবারওলা গাড়ি ফেরাচ্ছে ।সূর্যের গতিপথ অনুযায়ী আমি উল্টোদিকে হেঁটে চলেছি ।ছায়া পড়েছে বড়ো ।একটা অদ্ভুত দর্শন জনমজুর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এদিকে আসছে । তাকে কেন্দ্র করে কয়েকটা কুকুর থেমে থেমে ঝামেলা করছে ।আমিও যাচ্ছি সেইদিকে ।ওকে পেরিয়ে গেলেই কুকুরগুলো আমাকে বিরক্ত করা শুরু করবে । কিন্তু আমি পরমাণু বিস্ফোরণ নিয়ে চিন্তিত ।অন্য কিছু মাথায় আনলে ভাবনার বারোটা বেজে যেতে যাবে ।জামা কাপড়ের দোকানে লেখা ফিক্সড প্রাইস ।ভাড়াবাড়ির দরজায় লেখা too late । ঘিঞ্জি বস্তির রাস্তায় ঢুকতেই দেখি কয়েকটা মহিলা শাড়ি মেলা নিয়ে বাওয়াল শুরু করেছে ।আর তাদের কারো একটা বাচ্চা চৌকাঠে হেলান দিয়ে তাকিয়ে আছে শুকনো মুখে ।বোধহয় বলছে “ঝগড়া থামা, ভাত দে মাগীরা খিদে লেগেছে !” এবারে মেনরোডের মুখে এসে দাঁড়িয়েছি ।একটা ঠাকুর তৈরির গোলা, কয়েকজন ছেঁড়া গেঞ্জি পরে প্রতিমা বানাচ্ছে ।এপাশে একটা বড়ো পুকুর জায়গা জমি নিয়ে বিবাদের জেরে কারা বিষ মিশিয়ে দিয়েছে জলে ।প্রচুর মাছ মরেছে বিষে কালো হয়ে গেছে জল ।গন্ধে টেঁকা যাচ্ছে না মাছগুলো যেন সপাটে চোখ খুলে ভেসে উঠে এই দুস্কর্মের প্রতিবাদ করছে গন্ধ দিচ্ছে মানুষকে ।কাছেই একটা পেয়ারাওলা বসে এই পুতি গন্ধের মধ্যেই একেকেকটা পেয়ারা চার টুকরো করে গেরুয়া নুন ঠেসে দিয়ে যাচ্ছে খদ্দেরদের অবলীলায় ।একটা গ্যাস সিলিন্ডারের গাড়ি অনেক ক্ষণ ধরে রাস্তার ধারে লোড হচ্ছিলো ।কয়েকটা লোক দায়সারা ভাবে গাড়িতে সিলিন্ডার সাজাচ্ছিলো ধাপে ধাপে । এবারে হুড়মুড় করে কাঠামো ভেঙে সব রাস্তায় গড়িয়ে এলো ।রাস্তায় লোকজন খুব একটা নেই ।সিলিন্ডার গুলো ধাঁ করে ছুটে আসছে আমার দিকে পচা গন্ধে শরীর প্রায় অসাড়, নড়তে চড়তে পারছিনা ।দু একটা ছিটকে এসে পায়ে কোমরে লাগলো, আমি যন্ত্রনায় মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম ।চোখ থেকে খুলে পড়া চশমাটাকে থেঁতো করে চলে গেলো আরেকটা ।আরো কয়েকটা গড়িয়ে আসছে যেন এদিকে, ঝাপসা দেখতে পাচ্ছি ।দূরে পেয়ারাওলাটা তখনো একেরপর এক পেয়ারা চার ভাগ করে দিয়ে যাচ্ছে খদ্দেরদের ! দেখতে পাচ্ছি ! আমার মাথায় যুদ্ধ বিমানের মত ঘুরপাক খাচ্ছে হিরোশিমা ! নাগাসাকি!
চিত্র শিল্পী :

অলিভিয়া চক্রবর্তী


