‘ We are of the spirit

Truly of the spirit

Only can the spirit

Turn the world around.

দিন বদলের স্বপ্নই শুধু দেখে যেতেন না তিনি,  শিল্প এবং সক্রিয় কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে কীভাবে দিন বদলের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হয়, তা জানতেন। তিনি ক্যালিপ্সো-নায়ক বেলাফন্টে। যদিও নায়ক হতে তাঁর ঘোর আপত্তি ছিল কারণ সারাজীবনের প্রথম থেকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একজন অতি সাধারণ শিল্পী এবং লড়াকু কর্মী হিসাবেই তিনি থাকতে চেয়েছেন, থেকেছেন।

তাঁর গলার স্বরের আশ্চর্য মাদকতা, তাঁর গাওয়া গানের নিপাট সহজ সুর, সর্বজনবোধ্য অ্যাপ্রোচ এবং অত্যন্ত সাবলীল উচ্চারণে আমরা প্রতিবার মুগ্ধ হই, সাহস পাই নিঃসঙ্কোচে প্রশ্ন তুলতে পারার। মফস্বলীয় ছেলেমেয়েদের সেইসময়ে টেপরেকর্ডারে প্রথমবার Jamaica Farewell শোনা এবং ‘I had to leave a little girl in Kingston town’ এর সেই ছোট্ট মেয়েটাকে বাধ্য হয়ে ফেলে আসার কারণ অনুসন্ধান করার যে তীব্র চেষ্টা এবং মনে অদম্য জেদ চেপে যাওয়া— এগুলোর উদ্রেকে বেলাফন্টেকে আরো গভীরভাবে জানা, বোঝা। আবার ‘Coconut Woman’ শুনতে শুনতে সেই দাসশ্রমিক মহিলার প্রতিদিনের বেলাগাম খাটুনির পিছনের যে রহস্য, শুধু নারকেলের জল এবং ভাতের বিনিময়ে যে অফুরান শক্তি অর্জন— সেই গর্বের এবং প্রবল লজ্জার অধ্যায়গুলির সহজ চালের সুরের মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশেই বেলাফন্টের চিন্তাভাবনার ব্যাপ্তির কাছাকাছি আসা।

১৯৪০ এ একজন কর্মী হিসাবে কাজ করতে করতে প্রথমবার coincidentally আমেরিকান নিগ্রো থিয়েটারের আর্ট ফর্ম ও তাঁদের কাজের মুখোমুখি হওয়া এবং সেই সূত্রে বেলাফন্টের অভিনয় জগতে প্রবেশ। যদিও তিনি মুষ্টিমেয় কিছু সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন যা হয়তো অনেকেরই অজানা কিন্তু অভিনয়ে যে তিনি তুখোড় এবং দক্ষ ছিলেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। তাঁর অভিনীত সিনেমাগুলির মধ্যে ভীষণভাবে উল্লেখযোগ্য— Bright Road (1953), Island in the Sun (1957), Buck and the Preacher (1972) প্রভৃতি।

কিন্তু এসবের বাইরে গিয়েও বেলাফন্টের আরো এক অনন্য এবং নির্ভেজাল ব্যক্তিত্ব ছিল যা নিয়ে প্রায় উপরিউপর আলোচনাই শোনা যায়। এক কথায় তিনি ছিলেন কালো মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের এক সক্রিয় নেতৃত্ব। পল রোবসনের সাথে দেখা হওয়ার পর তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসে। তাঁর প্রতিবাদী সত্ত্বা ছিল অদম্য জেদ এবং উদ্যমে পরিপূর্ণ। ১৯৫৪ থেকে ১৯৬১— পশ্চিম আফ্রিকায় মার্কিন ঔপনিবেশিক আক্রমণের বিরুদ্ধে তাঁর সাউথ আমেরিকায় পারফর্ম্যান্স বয়কট এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে সিভিল রাইটস্ মুভমেন্টের মাধ্যমে যে দীর্ঘস্থায়ী লড়াই, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের জামিন আদায়ের জন্য লড়াই এবং সেই ঐতিহাসিক মিছিলে সমস্ত সাধারণ মানুষের সামনে কালজয়ী বক্তৃতা। এইডস্ মহামারীতে আফ্রিকার সমস্ত সাধারণ মানুষের সামান্য চিকিৎসা পাওয়ারও যখন কোনো অধিকার এবং সুবিধা ছিল না, তখন বেলাফন্টে ছিলেন— ছিলেন সাধারণ মানুষের প্রতিবাদী কণ্ঠ হয়ে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি ছিলেন সমস্ত মানুষের সমান অধিকারের পক্ষে, সাম্যের পক্ষে এবং সমস্ত রকমের দাসত্বের বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে, শাসকের বিরুদ্ধে। এই অটুট ব্যক্তিত্ব না ভয় করতেন কোনো দমনের, না পরোয়া করতেন কোনো হুমকির। তাইতো নির্দ্বিধায় তিনি সর্বসমক্ষে  তাঁর নিজের দেশের প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে সন্ত্রাসবাদী বলতে এক পাও পিছু হটেননি। কালো মানুষদের পক্ষে লড়াই করেছিলেন আজীবন কিন্তু তার মধ্যেই যখন কেউ কেউ নিজের সত্ত্বা বিকিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের তাঁবেদারী করেছে, তখন তাদেরকেও এক চুল ছেড়ে কথা বলেননি।

দুঃখের বিষয় এই যে, শোকজ্ঞাপনে আজকের অনেক অ্যাটেনশন-সিকার আধুনিক শিল্পী এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিত্ববানেরা বেলাফন্টের প্রয়ানে মিনিট কয়েকের কাঁদুনি লিখেছেন বা গেয়েছেন বটে, কিন্তু বেলাফন্টে আসলে কে ছিলেন, কেন ছিলেন— তা জানতে-জানাতে পারেননি; কিংবা হয়তো পেরেছেন, কিন্তু যেহেতু চিন্তা- চেতনার বিক্রিবাটা অনেকদিন আগেই করে ফেলেছেন, তাই এসবে আর কিছু যায় আসেনি!

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *