শিশুমৃত্যু থেকে উন্নাও গণধর্ষণ কাণ্ড; একের পর এক কাদা যোগীর গেরুয়া-বসনে লেগেই চলেছে। কিন্তু যোগী আছেন যোগীর মেজাজেই। আর এবারও বিতর্কের শিরোনামে উঠে এলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। জুম্মাবারে ও ঈদে রাস্তায় মুসলিমদের নমাজ পড়া নিষিদ্ধ করা হলো উত্তরপ্রদেশে; এবার থেকে মসজিদ ছাড়া ঈদের নমাজ পড়া যাবে কেবল ওয়াকফ বোর্ডের আওতায় থাকা সম্পত্তিতে। এই মর্মে গত কয়েকদিন আগেই আইন জারি করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী হবার আগে থেকেই গোরক্ষপুরের সাংসদ থাকাকালীন দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি একের পর বিদ্বেমূলক মন্তব্য করে লাইমলাইটে এসেছিলেন বিজেপির হিন্দুত্ব এজেন্ডার পোস্টারবয় যোগী আদিত্যনাথ। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই, গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে ‘ইসলামগন্ধী’ একের পর এক জায়গার, রেলস্টেশনের নাম পরিবর্তন করা শুরু করেন। জিগির তোলেন উত্তপ্রদেশের প্রত্যেকটি জায়গার প্রাচীন নাম নাকি তিনি ফিরিয়ে দিতে চান। যার জেরে দেশজুড়ে বিতর্ক ওঠে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলের শিকার হতে হয় তাকে। উগ্র ধর্মীয় উস্কানির বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন আসাদুদ্দিন ওয়েইসির সাথে।
উন্নাও ধর্ষনকান্ডে বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের গ্রেপ্তারিতে মুখ পুড়েছে বিজেপির। রাজ্যে রেকর্ড সংখ্যক এনকাউন্টারে মানুষ মেরেছে যোগীর পুলিশ, এসব ধামাচাপা দিতে কী মুসলমান বিদ্বেষের পরিচিত তাসটাই আবারও কী খেললেন যোগী? যদিও রাস্তায় নমাজ পড়া বন্ধ করতে ক্ষমতায় আসার প্রথম থেকেই উঠেপড়ে লেগেছিলেন যোগী। ভারতীয় সংবিধান যেখানে নাগরিকদের ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের উপর রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ করেছে সেই সংবিধানের শপথ নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী হওয়া যোগী আদিত্যনাথ সংকীর্ণ হিন্দু-ভাবাবেগকে উস্কে দিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে চলেছেন ক্ষমতায় আসার পর থেকে, একইভাবে যে কাজ বিগত আট বছর ধরে করে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০১৯-এ লোকসভায় উত্তরপ্রদেশ থেকে আশাতীত ভালো ফল করার পর যোগীর নেতৃত্বে রাজ্যের গৈরিকীকরণ আরো গতি পেয়েছে। গোরক্ষকদের তাণ্ডব আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। যোগীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপির আর এক সহচর বজরং দল। বজরং দলের পশ্চিমবঙ্গের এক নেতা জানিয়েছেন, রাস্তায় নমাজ বন্ধের এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে পশ্চিমবঙ্গেও কার্যকর করতে হবে নাহলে জুম্মার নমাজের বিপরীতে তারা রাস্তা আটকে প্রতি মঙ্গলবার হনুমান চালিশা পাঠ করবেন!
আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, গো-রক্ষকদের তাণ্ডবে প্রতিদিন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে উত্তরপ্রদেশের মুসলিম সমাজ। নমাজ বন্ধের এই সিদ্ধান্ত উত্তরপ্রদেশ সহ গোটা ভারতে অসহিষ্ণুতা যে আরো বাড়াবে তাও স্পষ্ট। আর এই অসহিষ্ণুতার সুযোগ নিয়েই মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে ঘোলাজলে মাছ ধরার খেলায় নামবে বিজেপি-আরএসএসের অন্নপুষ্ট কট্টরপন্থী কিছু উগ্র-ইসলামী রাজনৈতিক দল; চূড়ান্ত-মেরুকরন করে বিরোধী ভোট ভাগাভাগির অঙ্কে বিজেপিকে আরও বেশী জায়গা করে দেওয়াই যাদের উদ্দেশ্য; পশ্চিমবঙ্গে ওয়েইসির ‘এআইমিমের’ পদক্ষেপগুলি থেকেই স্পষ্ট অনুমান করা যাচ্ছে ।