দেড় বছর ব্যাপী ধাপে ধাপে করা লকডাউনের ভরপাই চেয়ে, লকডাউন প্রত্যাহার এবং বাধ্যতামূলক ভ্যাক্সিনেশন বন্ধ করার দাবীতে গত ২৮শে জুন পিপ্‌ল্‌’স্‌ ব্রিগেডের নেতৃত্বে হাসনাবাদের পাটলিখানপুর এলাকার গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ অভিযানে সামিল হয়। বিক্ষোভ অভিযান শুরু হবার আগেই গ্রামে ঢুকে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশ এবং জমায়েত থেকে আন্দোলনের মূল নেতৃত্বকে গ্রেপ্তার করে।

পিপ্‌ল্‌’স্‌ ব্রিগেডের তরফ থেকে জানানো হয় যে, পাটলিখানপুর এলাকার মানুষ লকডাউন প্রত্যাহার সহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে হাসনাবাদ শহরে এসে বিক্ষোভের কর্মসূচী নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। কিন্তু আন্দোলনের আগের রাত থেকেই গ্রামে ঢুকে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা ও গুণ্ডারা ঘরে ঘরে ঢুকে শাসানি দিতে শুরু করে।

 শাসানি সত্ত্বেও ২৮ শে জুন সকালে গ্রামবাসী কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করে। সেই সময়ে ফের গ্রামে ঢোকে পুলিশ, গ্রামবাসীদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে  তিনশ’র বেশী গ্রামবাসী পায়ে হেঁটে গ্রাম থেকেই মিছিল শুরু করেন। মিছিল কিছুদূর এগোতেই বিশাল পুলিশ বাহিনী গ্রামে ঢুকে পড়ে, গ্রামবাসীদের সাথে পুলিশের বচসা-হাতাহাতিতে গ্রামের ভেতর রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে, আর সেই সুযোগে সম্পূর্ণ অপহরণের কায়দায় পিপলস ব্রিগেডের কমঃ কিংশুক চক্রবর্তী, কমঃ শেখর ঘোষকে গাড়িতে তুলে চম্পট দেয় পুলিশ। কমঃ শেখর জানান, “গাড়িতে তুলেই আমাদের ওপর ব্যপক মারধর শুরু হয়, গাড়িতে তুলেই দুজনের মোবাইল কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দেয় পুলিশ। থানায় নিয়ে গিয়েও মার চালায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের কোনোরকম কোনো খবর কাউকে দেয়নি পুলিশ।”

 অন্যদিকে গ্রামবাসীরা থানার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে মাঝরাস্তায় তাদের পথ আটকে ফের আগ্রাসন নামায় পুলিশ, গ্রেফতার করে আরিফ গাজী নামে আরও এক আন্দোলনকারীকে। গ্রামবাসীরা সেখানেই সন্ধ্যা অবধি অবস্থান করেন।

আন্দোলনকারীরা জানান, “বন্দীদের সাথে ২৮ তারিখ কাউকে দেখা অবধি করতে দেয়নি পুলিশ, থানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি উকিলকেও, গ্রেফতারি সংক্রান্ত কোনো তথ্যই দেওয়া হয়নি পুলিশের তরফে। রাত ১টার পর কমঃ শেখর ঘোষকে সিসিটিভি বিহীন ঘরে নিয়ে গিয়ে পার্টির শীর্ষনেতৃত্বদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ, আশানুরূপ উত্তর না পেয়ে তার উপর শারিরীক নির্যাতন চালায় পুলিশ।” জানা গিয়েছে, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এবং হাসনাবাদ থানার আইসি একত্রে ‘উপরমহল’-এর নির্দেশেই গোটা কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।

পরদিন, ২৯শে জুন বসিরহাট আদালতে মহামারি আইনের আওতায় জামিন পান বন্দীরা। মুক্তি পাওয়ার পর কমঃ কিংশুক চক্রবর্তী বলেন, “গ্রেফতার করে ভয় দেখিয়ে আন্দোলন আটকানো যায় না, এই দুদিনের ঘটনায় গোটা গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ। এই ঘটনা, এই পুলিশি শাসনের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিস্ট তৃণমূল সরকারের লকডাউনবিধি এবং বাধ্যতামূলক ভ্যাক্সিনেশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে আরও জোরদার করে তুলবে।” তিনি আরও বলেন, “মহামারি আইনের নামে রাজ্যে পুলিশ রাষ্ট্র কায়েম হয়েছে। লকডাউন, বাধ্যতামূলক ভ্যাক্সিনেশনও এই পুলিশ রাষ্ট্রেরই অংশ। আর এই পুলিশ রাষ্ট্রই ফ্যাসিবাদের ভিত্তি মজবুত করছে। এর বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

গোটা ঘটনায় বিক্ষুব্ধ পিপলস ব্রিগেড নেতৃত্ব। নেতৃত্বের তরফে কমঃ অরিত্র বসু জানান, “লকডাউন এবং বাধ্যতামূলক ভ্যাক্সিনেশনের বিরুদ্ধে যাতে কোনো শব্দ না তোলা যায় তা সুনিশ্চিত করতে চাইছে রাজ্য সরকার। গত ৯মার্চ কলকাতায় বদ্ধ রামলীলা ময়দানের ভেতর পুলিশের গ্রেফতারি এবং তারপর গত দু’দিনের ঘটনা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফ্যাসিস্ট চরিত্রকে আমাদের সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছে। গণতন্ত্রের ন্যূনতম পরিসর নেই, এর বিরুদ্ধে একদিকে ব্যপক গণ আন্দোলন এবং অন্যদিকে আইনি পথে আমরা লড়াই চালাবো।” গোটা ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে  পিপ্‌ল্‌’স্‌ ব্রিগেড নেতৃত্ব।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *