প্রশ্নটা আজকের দিনে আর ‘বাজারী মিডিয়ার মদতপুষ্ট’, ‘সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্ত’ বা ‘স্বতঃস্ফূর্ততার পূজো’ বলে এড়িয়ে যাওয়া চলে না। বিশেষ করে গত শতাব্দীর অভিজ্ঞতা যখন দেখিয়ে দিয়েছে যে, যে সমস্ত কমিউনিস্ট পার্টিগুলিতে একবার ধ্বস নামতে শুরু করেছে, এমন কি যারা দেশে মজুর বিপ্লব সফল করে তুলেছিল, সমাজতন্ত্র নির্মাণের কাজে এগিয়ে গিয়েছিল, তারাও পর্যন্ত কেউই আর সে ঝড় সামলে নিয়ে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি, তখন বিজ্ঞানসম্মত ভাবে প্রশ্নটার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করাটা শুধু প্রয়োজনই নয়, জরুরী। সাম্রাজ্যবাদ বা বাজারী মিডিয়া যে এধরণের প্রশ্নে ধুয়ো দেয়, তা অনস্বীকার্য; কিন্তু তার জন্যই একটা প্রশ্ন ভিত্তিহীন হয়ে যায় না; বিশেষ করে বাস্তব উদাহরণ যখন বাড়তে থাকে। আর ‘স্বতঃস্ফূর্ততার পূজো’ কি কমিউনিস্ট পার্টির স্ট্রাকচার দিয়েও করা যায় না, যার চটকদার তাত্ত্বিক নাম হয় “গণলাইন-এর বিপ্লবী পার্টি” (Revolutionary Party with a Mass Line) আর যার ব্যবহারিক রূপ হয় “জনগণ চাইছে তাই…” ?

কিন্তু প্রশ্নটার একটা বিজ্ঞানসম্মত উত্তর খুঁজতে হলে একটি নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধ গণ্ডির মধ্যে আটকে থাকা চলে না, তার সাধারণীকরণ করাটা আবশ্যক। আর এই সাধারণীকরণ করলে যেটা দেখা যায় যে বিষয়টা কেবল এটুকুই নয় যে, ধ্বসতে থাকা কমিউনিস্ট পার্টিগুলি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না, তার সাথে অন্য জায়গার অন্য ধরণের কমিউনিস্ট পার্টিগুলির উত্থানও একটা অনস্বীকার্য সত্য। এর পরীক্ষাটা শুরু করা দরকার তাই রুশ পার্টির পতন থেকে ততোটা নয় (সাধারণ ভাবে যেটা করা হয়ে থাকে), যতোটা বরং তার উত্থানের সময় থেকেই। 

বিশ শতকের শুরুতে মার্কস-এঙ্গেলস-এর ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত কাউটস্কি সহ দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের একাধিক নেতা কিংবা প্লেখানভের মতো উঁচু দরের মার্কসবাদী নেতাদের নেতৃত্বে চলা পার্টিগুলি ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে গেল এবং লেনিনের নেতৃত্বে উঠে এল এক নতুন ধাঁচের কমিউনিস্ট পার্টি। সংঘটিত হল দুনিয়ার প্রথম সফল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। ইউরোপের প্রথম সারির দেশগুলোর বদলে দ্বিতীয় সারির দেশে এল বিপ্লব। আবার প্রায় অর্ধ-শতাব্দী পরে বিপ্লব এল আরও অনুন্নত কিছু দেশে আরও অন্য ধরনের পার্টি ও পন্থার হাত ধরে; যে সময় জুড়ে ভেতর থেকে ভাঙতে লাগলো আগের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো, অবক্ষয়ের পথে এগোতে লাগলো তাদের পার্টিগুলো। কেবল পার্টি স্ট্রাকচারই কি এর যথেষ্ট ব্যাখ্যা হাজির করতে পারে? 

মনে রাখা প্রয়োজন, সবকটি রাজনৈতিক পার্টিই কোনও না কোনও শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বকারী পার্টি এবং সেই শ্রেণীকে শাসকের স্তরে উন্নীত করাই সেই পার্টির লক্ষ্য। ‘কমিউনিস্ট পার্টি’ হল প্রলেতারিয়েত (সর্বহারা) শ্রেণীর পার্টি। কিন্তু অন্যান্য শ্রমিক পার্টিগুলির থেকে তার সবিশেষ পার্থক্য কোথায়? ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’-তে স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা হয়েছিল বিষয়টা [১] :

“শ্রমিক শ্রেণীর অন্যান্য পার্টি থেকে কমিউনিস্টদের তফাতটা শুধু এই : ১) বিভিন্ন দেশের প্রলেতারিয়ানদের জাতীয় সংগ্রামে তারা জাতি-নির্বিশেষে সমগ্র প্রলেতারিয়েতের সাধারণ স্বার্থটার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তাকেই সামনে টেনে আনে। ২) বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণীর লড়াইকে যে বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে চলতে হয়, তাতে তারা সর্বদা এবং সর্বত্র সমগ্র আন্দোলনের স্বার্থটাকে তুলে ধরে”।

কিন্তু সমগ্র আন্দোলনের এই সাধারণ স্বার্থটা ঠিক কী? তার উত্তরে বলা হয় :

“কমিউনিস্টদের তত্ত্বকে এই এককথায় চুম্বক করা যায় : ব্যক্তিগত মালিকানার উচ্ছেদ”।

কেন প্রলেতারিয়েতের সমগ্র আন্দোলনের সাধারণ স্বার্থ এই “ব্যক্তিগত মালিকানার উচ্ছেদ”? সমাজের বিকাশধারার একটা বিশেষ স্তরে, পুঁজিবাদের অ্যাডভান্সড একটা পর্যায়ে, যে ব্যক্তিগত মালিকানার উচ্ছেদের বাস্তব অবস্থার সৃষ্টি হয়, তা মার্কসবাদের একটা মৌলিক কথা, আমরা এখানে সে প্রশ্নের ব্যখ্যায় যাব না। প্রলেতারিয়েত শ্রেণীই কেন তার কার্যকরী শক্তি সেটাই আসল প্রশ্ন, আর তার ভিত্তিতেই খুঁজে বার করতে হয় প্রলেতারিয়েত শ্রেণী কোনটি। 

কনভেনশনাল চিন্তা-ভাবনায়, ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’-র ফুটনোটে যেমনটা বলা হয়েছে, আধুনিক ফ্যাক্টরির মজদুরেরাই হল প্রলেতারিয়েত শ্রেণী [২]। কিন্তু কেন? ‘ব্যক্তিগত মালিকানার উচ্ছেদ’-এ তাদেরই প্রধান ভূমিকা থাকার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যাটাই বা কী? মার্কস-এঙ্গেলস দেখান, আসলে উৎপাদনে যুক্ত মালিকানাবিহীন শ্রেণী একমাত্র আধুনিক ফ্যাক্টরির মজদুরেরা। উৎপাদনের উপায়-উপকরণ কিছুই তাদের নেই, আছে কেবল খাটবার ক্ষমতা (শ্রমশক্তি)। আর তাকে শুষেই মালিকের হাতে যায় মুনাফা-সুদ-লিজের ভাড়া। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই মালিকানাহীন শ্রেণীটারই সাধারণ স্বার্থ হয়ে দাঁড়ায় ব্যক্তিগত মালিকানার উচ্ছেদ। উনিশ শতকে এই শ্রেণীটার উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছিল পশ্চিম ইউরোপে, সবার আগে ইংল্যান্ড, জার্মানি ও ফ্রান্স-এ, পুঁজিবাদের উদ্ভব ও বিকাশের সাথে সাথে। ফলে সমাজ-বিপ্লবের অভ্যুত্থানও ঘটেছিল এখানেই, আর তার অক্ষ ছিল প্রলেতারিয়েত শ্রেণী, অর্থাৎ এই সব দেশের আধুনিক ফ্যাক্টরির মজদুরেরা। মনে রাখা দরকার, কমিউনিস্ট পার্টিগুলি ও তার আন্তর্জাতিক সংগঠন, সেসময়ে যতই অপরিণত ধরণের হয়ে থাক, গড়ে উঠেছিল মুখ্যত এই দেশগুলির এই শ্রেণীটির ওপর ভিত্তি করেই।

কিন্তু মার্কস-এঙ্গেলস বেঁচে থাকতেই লক্ষ করেছিলেন যে বিপ্লবের অক্ষটি ক্রমে সরে যাচ্ছে প্রথম সারির পুঁজিবাদী দেশগুলি থেকে দ্বিতীয় স্তরের দেশগুলিতে, প্রধানত রাশিয়ায়। ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’-র ১৮৮২ সালের রাশিয়ান সংস্করণের ভূমিকায় তাঁরা বলেন : 

“১৮৪৮-৪৯ সালের বিপ্লবের সময়, শুধু ইউরোপের রাজন্যবর্গই নয়, ইউরোপীয় বুর্জোয়ারাও, সবে সচেতন হতে শুরু করা সর্বহারাদের থেকে একমাত্র পরিত্রাণ পেয়েছিল রাশিয়ার হস্তক্ষেপে। রাশিয়ার জার ঘোষিত হয়েছিলেন ইউরোপীয় প্রতিক্রিয়ার প্রমুখ হিসাবে। আজ, তিনি গাত্‌চিনায় বিপ্লবের এক যুদ্ধবন্দী, এবং ইউরোপে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের অগ্রবাহিনী হয়ে উঠেছে রাশিয়া”।

তবে সময়ের সাথে বিপ্লবের অক্ষের এই সরণের বিষয়টা সুনির্দিষ্ট ভাবে প্রথম উঠে আসে লেনিনের বক্তব্যে, তাঁর অনবদ্য কৃতিত্ব, পুঁজিবাদের নতুন যুগ ‘সাম্রাজ্যবাদ’-এর আবির্ভাবের গভীর ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে। পুঁজির একচেটিয়ার এই যুগটাতে বিপ্লবের অক্ষটি যে সরে গেছে রাশিয়ার মতো দ্বিতীয় সারির দেশগুলিতে এবং তৃতীয় বিশ্বের কলোনিগুলোয়, যাদেরকে দুনিয়ার ভাগ-বাঁটোয়ারার যুদ্ধে টেনে এনেছে প্রথম সারির সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি, লেনিনের এ ব্যাখ্যা সবার জানা। কিন্তু এরই মধ্যে শ্রেণীগত ভাবে অক্ষের সরণ কতটা কিভাবে হয়েছিল, তার যে ব্যাখ্যা লেনিন দিয়েছিলেন, তা বহু মার্ক্সবাদীর ‘অগোচরে’ থেকে গেছে, কেউ বা সজোরে চেপে গেছেন। সাম্রাজ্যবাদের যুগে, আসলে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অক্ষটা সরে গিয়েছিল প্রথম সারির পুঁজিবাদী দেশগুলোর ফ্যাক্টরি শ্রমিকদের অ্যাড্‌ভান্স্‌ড্‌ অংশ থেকে তাদের নীচতলার শ্রমিক এবং দ্বিতীয় সারির দেশগুলোর ফ্যাক্টরি শ্রমিক ও কৃষক সমাজের একটা বড় অংশের দিকে। এখানে দুটি বিষয়কে পৃথক ভাবে বোঝা প্রয়োজন : এক, প্রথম সারির দেশের অ্যাড্‌ভান্স্‌ড্‌ শ্রমিকদের কী হয়েছিল; আর দুই, দ্বিতীয় সারির দেশগুলোর কৃষকদের ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল?

প্রথম ক্ষেত্রে, সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি উপনিবেশ থেকে যে বাড়তি মুনাফা কামাচ্ছে, লেনিন দেখান [৩] :

“এই সুবিপুল উপড়িমুনাফা থেকে (কারণ ‘নিজ’ দেশের মজুরদের নিংড়ে যে মুনাফা করা হয় এটা তারও উপড়ি পাওনা) শ্রমিক নেতাদের এবং উচ্চতর পর্যায়ের ‘শ্রমিক কুলীনদের’ ঘুষ দেওয়া যে সম্ভব তা সুস্পষ্ট…”।

“বুর্জোয়া বনে যাওয়া মজুরদের এই স্তরটি তথা এই ‘শ্রমিক কুলীনতন্ত্র’ তাদের জীবনযাত্রার ধরন-ধারণে, উপার্জনের পরিমাণে এবং সমগ্র দৃষ্টিভঙ্গিতেই পুরোপুরি ফিলিস্তিন; এবং এরাই হল দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রধান অবলম্বন এবং আমাদের আমলে বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রধান সামাজিক (সামরিক নয়) স্তম্ভ”।

অর্থাৎ, প্রথমত সাম্রাজ্যবাদের যুগে প্রথম সারির পুঁজিবাদী দেশগুলি, পুঁজির বিকাশ কম ঘটেছে এমন দেশগুলিতে পুঁজির রপ্তানি ক’রে (পণ্যের রপ্তানির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা), লভ্যাংশ হিসাবে যে মুনাফা আদায় করছে, তার থেকেই তাদের নিজেদের দেশের শ্রমিকদের অ্যাড্‌ভান্স্‌ড্‌ অংশের মজুরী ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে তাদেরকে রাষ্ট্রের পক্ষে নিয়ে চলে আসা হচ্ছে। এর থেকেই ঘটছে শ্রমিক আন্দোলনে ‘সুবিধাবাদ’-এর উন্মেষ। মনে রাখা দরকার শ্রমিকদের এই অ্যাড্‌ভান্স্‌ড্‌ অংশটাই পুঁজিবাদের আগের যুগটায় ছিল বিপ্লবী প্রলেতারিয়েত শ্রেণী এবং কমিউনিস্টদের পার্টিগুলিও এদের ভিতের ওপরেই তৈরি হয়েছিল, এমন কি দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকও তাই-ই। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদের নয়া যুগ, তার রপ্তানি করা পুঁজির লভ্যাংশ-এর উচ্ছিষ্ট ছুঁড়ে দিয়ে এই শ্রেণীটাকেই বানিয়ে তুলল ‘কুলীন’। এখন বোঝা দরকার, ‘পার্টি’ কোনও অ্যাবস্ট্র্যাক্ট কনসেপ্ট নয়, তা বাস্তব মানুষ দিয়ে তৈরি, যারা কোনও না কোনও শ্রেণীর প্রতিনিধি। যে পার্টি সামগ্রিক ভাবে শ্রমিকদের এই অ্যাড্‌ভান্স্‌ড্‌ অংশটার প্রতিনিধি ছিল, তাদের দিয়েই গড়া ছিল, সেই শ্রেণীটার ‘সুবিধাবাদ’-এর মধ্যে ঢুকে পড়ার সাথে সাথে, সেই শ্রেণীটার রাষ্ট্রের পক্ষে চলে যাওয়ার সাথে সাথে, গোটা পার্টিটারই রাষ্ট্রের পক্ষে চলে যাওয়াও হয়ে দাঁড়ায় একটা ভবিতব্য, যদি না সচেতন ভাবে তাকে নিয়মিত বৈজ্ঞানিক পরোখের মধ্যে রাখা হয়। এটাই বাস্তবে ঘটেছিল। আর ঠিক এই কারণেই দরকার শ্রেণীর পার্টি, কিন্তু শ্রেণীর স্বতঃস্ফূর্ত পার্টি নয়। শ্রেণীর স্বতঃস্ফূর্ততা থেকে পার্টি তৈরি হয় না, শ্রেণীর বিজ্ঞান থেকে হয়। সত্য কল্পনার থেকেও বেশি বিস্ময়কর যে, যে কাউটস্কি এক সময় এই কথাগুলোই অনবদ্য ভাবে তুলে ধরেছিলেন, লেনিন ‘কী করতে হবে’ বইতে যার গোটাটা উদ্ধৃত করেছিলেন, সেই কাউটস্কি পর্যন্ত সুবিধাবাদের অতলে তলিয়ে গেলেন ! 

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও তার শ্রমিক শ্রেণীর উদাহরণ দিয়ে লেনিন বলেন [৪]

“… শ্রমিকদের ‘উচ্চতর পর্যায়’ এবং ‘সত্যিকারের সর্বহারাদের নিয়ে গঠিত নিম্নতর পর্যায়ের’ মধ্যে সুস্পষ্ট ব্যবধান করতে হয়। সমবায় সমিতি, ট্রেড ইউনিয়ন, খেলাধুলার সংঘ এবং অসংখ্য ধর্মগত গোষ্ঠীর সমগ্র সভ্যসংখ্যার বিপুলতর অংশই এসেছে এই উচ্চতর পর্যায় থেকে। এই ছাঁচেই আবার নির্বাচনী ব্যবস্থাকে খাপ খাইয়ে নেওয়া হয়েছে। যা এখনও পর্যন্ত ‘সত্যিকারের সর্বহারাশ্রেণী রূপ যে নিম্নতর স্তর তাকে বাদ দিয়ে রাখবার মতো যথেষ্ট রকম আঁটসাঁট”।

কার্যত, সাম্রাজ্যবাদের যুগে প্রথম সারির দেশগুলোর শ্রমিকদের অ্যাড্‌ভান্স্‌ড্‌ অংশটা আর প্রলেতারিয়েত ছিলই না, বুর্জোয়া বনে যাওয়া কুলীন হয়ে গিয়েছিল। নিচুতলার শ্রমিকরাই (লেনিন যাকে “সত্যিকারের সর্বহারাশ্রেণী রূপ নিম্নতর স্তর”’ বলেছেন) হয়ে উঠেছিল এযুগের প্রলেতারিয়েত। এই রকম এক পরিস্থিতিতে পার্টিকে সামগ্রিক ভাবে ‘কুলীন শ্রমিক’–দের থেকে নিচুতলার শ্রমিকদের দিকে ঘোরাতে না পারলে বিপ্লবীদের অবশ্য-কর্তব্য হল নীচতলার শ্রমিকদের পৃথক পার্টি বানানো। আর তাই লেনিন স্পষ্ট ঘোষণা করেন : 

“এই দিক থেকে সবচাইতে বিপজ্জনক হল তারা, যারা বুঝতে চায় না যে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম তা যদি সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সাথে যুক্ত না হয় তাহলে সেই সংগ্রাম হয় একটা ছলনা, একটা প্রবঞ্চনা”।

দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, পুঁজিবাদের বিকাশের দিক থেকে দ্বিতীয় সারির দেশগুলোয় ফ্যাক্টরি শ্রমিকেরা প্রথম সারির দেশগুলোর নীচতলার শ্রমিকদের সমতুল্যই ছিল, ফলে তাদের প্রলেতারিয় ভূমিকার বিষয়টা সতঃস্পষ্ট; কিন্তু বিপ্লবে এই দেশগুলোর কৃষকদের শ্রেণীগত প্রশ্নটা ঠিক কী ছিল?

স্তালিন প্রাঞ্জল ভাবে ব্যাখ্যা করেন [৫]

“প্রশ্নটা তাহলে এইভাবে দাঁড়ায় : কৃষকদের বিশেষ অবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করতে বাধ্য হওয়ার দরুন তাদের ভিতর যে সুপ্ত বিপ্লবী সম্ভাবনা থাকে, তা কি ইতিমধ্যেই নিঃশেষ হয়ে গেছে, না যায়নি? যদি না গিয়ে থাকে, তবে কৃষকদের তাদের মধ্যেকার অধিকাংশ শোষিত সাধারণকে কি বুর্জোয়াদের মজুতবাহিনী থেকে শ্রমিক শ্রেণীর মজুত বাহিনীতে রূপান্তরিত করার কোনও আশা, কোনও ভিত্তি আছে? … লেনিনবাদ এর উত্তরে বলে, হ্যাঁ সম্ভব”।

কী সেই ভিত্তি? বিশ শতক শুরুর আগেই ‘রাশিয়ায় পুঁজিবাদের বিকাশ’ বইটিতে লেনিন মার্কসবাদের ভিত্তিতে সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেন কৃষিক্ষেত্রে পুঁজিবাদ কি ভিন্ন ধরণের পদ্ধতিতে কাজ করে এবং কৃষিতে প্রলেতারিয়েত বলতে কী বোঝায়। তিনি দেখান, কেবল ভূমিহীন ক্ষেতমজুরই প্রলেতারিয়েত নয়, ছোট জমির মালিক কৃষকদের বড় অংশটাও প্রলেতারিয়েত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হয় [৬] :

“অন্য এক নতুন ধরণ হল গ্রামীণ প্রলেরিয়েত, বিলি-জমিপ্রাপ্ত মজুরী-শ্রমিকদের শ্রেণী। এর মধ্যে আছে গরীব চাষিরা, যারা এমন কি সম্পূর্ণ ভূমিহীন তারা সমেত; কিন্তু রুশ গ্রামীণ প্রলেরিয়েতের সবচেয়ে পরিচিত প্রতিনিধি হল বিলি-জমিপ্রাপ্ত ফার্ম মজদুর, দিন-মজুর, অদক্ষ শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, অথবা অন্যান্য বিলি-জমিপ্রাপ্ত শ্রমিক।  

এটা যোগ করা উচিত যে আমাদের সাহিত্য প্রায়ই তাত্ত্বিক প্রস্তাবনার একটা খুবই ছাঁচেঢালা বোঝাপড়া ধরে রাখে যেন পুঁজিবাদ মাত্রেই প্রয়োজন মুক্ত ভূমিহীন শ্রমিক। মূল প্রবণতাটিকে চিহ্নিত করার জন্য এই প্রস্তাবনা একদমই সঠিক, কিন্তু পুঁজিবাদ কৃষিতে প্রবেশ করে বিশেষভাবে ধীরগতিতে এবং চূড়ান্ত রকম বিবিধ রূপে। গ্রামীণ শ্রমিকদের জমি বিলি বেশীরভাগ সময়েই হয়ে থাকে গ্রামীণ মনিবদেরই স্বার্থে, এবং সেজন্যই বিলি-জমিপ্রাপ্ত গ্রামীণ শ্রমিক এমন এক রূপ যা সকল পুঁজিবাদী দেশেই দেখা যায়। এটা নানা দেশে নানা রূপে দেখা দেয় : ব্রিটিশ কুটিরবাসী শ্রমিক ফ্রান্স বা রাইন প্রদেশের ছোট জমির মালিক চাষির মতো নয়, এবং এই দ্বিতীয়রা আবার প্রুশিয়ার নেখ্‌ট-এর মতো নয়। এদের প্রত্যেকেই একটা সুনির্দিষ্ট কৃষি-ব্যবস্থার, একটা সুনির্দিষ্ট কৃষি-সম্পর্কের ইতিহাসের চিহ্ন বহন করে – কিন্তু তা তাদের সকলকেই এক ধরণের কৃষি-প্রলেতারিয়েত হিসাবে শ্রেণীতে সংজ্ঞায়িত করতে অর্থনীতিবিদকে বাধা দেয় না। এই শ্রেণী সংজ্ঞার ক্ষেত্রে তার জমির খণ্ডের ওপর তার অধিকারের আইনি ভিত্তি একেবারেই গুরুত্বহীন। জমি তার সম্পূর্ণ সম্পত্তি কিনা (ছোট জমির মালিক চাষি হিসাবে), নাকি তাকে শুধু জমি ব্যবহার করতে দিয়েছে জমির মালিক, নাকি শেষ পর্যন্ত সে এর মালিক গ্রেট রাশিয়ান কৃষককুলের একজন সদস্য হিসাবে, – তাকে কিছুই এসে-যায় না। 

দরিদ্র কৃষকদের গ্রামীণ প্রলেতারিয়েত হিসাবে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে আমরা কোনও নতুন কথা বলছি না। এ শব্দটি অনেক লেখকের দ্বারাই বারংবার ব্যবহৃত হয়ে এসেছে, এবং কেবল নারদনিক অর্থনীতিবিদরাই সাধারণভাবে কৃষকদের সম্পর্কে বলতে থেকেছে, পুঁজিবাদ-রহিত কিছু একটা, এবং এই বিষয়ে তাদের চোখ বন্ধ রেখেছে যে ‘কৃষক’ জনতা ইতিমধ্যেই পুঁজিবাদী উৎপাদনের সাধারণ ব্যবস্থায় একটা সুনির্দিষ্ট অবস্থান নিয়ে নিয়েছে, বলতে কি, কৃষি এবং শিল্পের মজুরী-শ্রমিক হিসাবে”।

ছোট জমির মালিক হিসাবেই চাষির ‘প্রলেতারিয়েত’-এ পরিণত হওয়ার বিষয়টি লেনিন আরও ব্যাখ্যা করেন মার্কসের থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে [৭]:

“…‘কৃষকদের ক্ষুদ্রায়তন সম্পত্তি পুঁজিপতিদের পক্ষে জমি থেকে মুনাফা, সুদ ও খাজনা আদায়ের অছিলায় মাত্র দাঁড়ায়, আর নিজের পারিশ্রমিকটুকু যেভাবেই হোক তোলার ভার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ভূমির মালিকেরই ওপর’ (‘আঠারোই ব্রুমেয়ার’)। সাধারণত চাষী এমনকি তার নিজের পারিশ্রমিকের একটা অংশ পর্যন্ত দিয়ে দেয় পুঁজিবাদী সমাজের জন্যে, অর্থাৎ পুঁজিপতি শ্রেনীর জন্যে এবং নিজেকে নামতে হয় ‘আইরিশ প্রজাচাষীর সমপর্যায়ে, অথচ যেন সে ব্যাক্তিগত সম্পত্তি-মালিক–এই ভাব করে’ (‘ফ্রান্সে শ্রেণীসংগ্রাম’)। ‘যে দেশে ক্ষুদ্রাকার চাষবাসের আধিক্য সে দেশে খাদ্যশস্যের দাম পুঁজিবাদী উৎপাদন-পদ্ধতি যেসব দেশ গ্রহণ করেছে তাদের চেয়ে যে কম, তার অন্যতম কারণ কী?’ (‘পুঁজি’, খন্ড ৩)। কারণ, কৃষক তার উদ্বৃত্ত উৎপন্ন দ্রব্যের একাংশ বিনামূল্যে সমাজের হাতে (অর্থাৎ পুঁজিপতি শ্রেণীর হাতে) ছেড়ে দেয়। ‘সুতরাং, (খাদ্যশস্য এবং অন্যান্য কৃষিজাত দ্রব্যের) এই নিচু দাম হল উৎপাদকদের দারিদ্র্যের পরিণাম কোনোক্রমেই তাদের শ্রম-উৎপাদনশীলতার ফল নয়’ (‘পুঁজি’, খন্ড ৩)।”

অর্থাৎ বিশেষ করে বিকশিত পুঁজিবাদ তথা সাম্রাজ্যবাদের যুগে কৃষিপ্রধান দ্বিতীয় সারির দেশে কৃষকসমাজের মধ্যে এক সুবিপুল প্রলেতারিয় শ্রেণীর জন্ম হয়, যা স্বাভাবিকভাবেই প্রলেতারিয় বিপ্লবের অন্যতম অক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। শ্রমিক-কৃষক মৈত্রীর প্রশ্নটি তাই কেবল কৌশলগত বিষয় নয় (যদিও কৌশলের বিষয়টাও সেখানে আছে, কিন্তু তা অপ্রলেতারিয় কৃষকদের প্রশ্নে), এ মৈত্রী বিপ্লবের নতুন যুগের নতুন অক্ষও বটে। নারদনিকরা তো বটেই, এমনকি সোশ্যালিস্ট রেভলিউশনারি, মেনশেভিক ও ট্রটস্কাইটরাও নিজেদের পেটি বুর্জোয়া অবস্থান থেকে কৃষক সমাজের মধ্যেও ঐ মধ্যশ্রেণীটার বাইরে আর কিছুই খুঁজে পায়নি, ফলে বিপ্লবের এই গুরুতর প্রশ্নটি তারা অনুধাবনই করতে পারেনি। 

অন্যদিকে, সাম্রাজ্যবাদের এই যুগে তৃতীয় বিশ্বের কলোনিগুলোয় বিপ্লবের প্রকৃতিটি ঠিক কী রূপ ধারণ করেছিল? লেনিন দেখান [৮]

“অগ্রগামী দেশগুলিতে গড়ে উঠেছে ‘পুঁজির অতি প্রাচুর্য’-এর এক সুবিশাল পরিমাণ।… এই উদ্বৃত্ত পুঁজি লাগানো হবে বিদেশে পশ্চাৎপদ দেশগুলিতে পুঁজি রপ্তানি করে মুনাফা বাড়াবার উদ্দেশ্যে। এই সমস্ত দেশে পুঁজি বিরল, জমির দাম অপেক্ষাকৃত কম, মজুরী অল্প, কাঁচামাল সস্তা, কাজে কাজেই মুনাফা সাধারণত বেশি”।

শ্রেণীগত দিক দিয়ে এর পরিণাম কী হয়েছিল? বিষয়টি স্তালিন ব্যাখ্যা করেন এভাবে [৯]:

“সাম্রাজ্যবাদ হল উপনিবেশ আর পরাধীন দেশের কোটি কোটি জনসাধারণের ওপর চরম অমানুষিক অত্যাচার, নগ্নতম শোষণ চালাবার ব্যবস্থা। এই শোষণ আর অত্যাচারের উদ্দেশ্য হল জনসাধারণকে নিংড়ে অতি-মুনাফা আদায় করা। কিন্তু এই সব দেশ শোষণ করতে গিয়ে সাম্রাজ্যবাদ সেখানে রেলপথ, কলকারখানা গড়ে তুলতে এবং শিল্প ও বাণিজ্যকেন্দ্র সৃষ্টি করতে বাধ্য হয়। এই ‘নীতির’ অবশ্যম্ভাবী ফল হিসাবে আবির্ভাব ঘটে এক শ্রমিক শ্রেণীর, অভ্যুদয় হয় দেশী বুদ্ধিজীবীদের, জাতীয় চেতনা জেগে ওঠে, মুক্তি আন্দোলন বেড়ে ওঠে”।   

         

অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদের ব্যাপ্তির সাথে সাথে বিপ্লবের শ্রেণী অক্ষটি আরও সরে যেতে থাকে ঔপনিবেশিক দেশগুলির সবে গজিয়ে ওঠা অপরিণত প্রলেতারিয়েত শ্রেণী আর একটা নব-অভ্যুদিত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী অংশের দিকে, যারা আদতে পেটি বুর্জোয়া শ্রেণীর মধ্যেই পড়ে। বিপ্লবের প্রকৃতিটাও জাতীয় মুক্তি ও পেটি বুর্জোয়া গণতন্ত্র না হয়ে পারে না। চীন, কিউবা, ভিয়েতনামের বিপ্লব তার জ্বলন্ত সাক্ষ্য। প্রকৃতির দিক থেকে এই বিপ্লব পেটি বুর্জোয়া চরিত্রের হলেও আদর্শগত অবস্থান কেন্দ্রীভূত হয়ে যায় প্রলেতারিয়েত শ্রেণীর অভিমুখে, সে যতই অপরিণত হোক না কেন, কারন এই শ্রেণীটাই ভবিষ্যতের প্রতিনিধিত্ব করে। স্বাভাবিক ভাবেই এই বিপ্লবগুলির নেতৃত্বে চলে আসে কমিউনিস্ট পার্টিগুলি, যা এই দেশগুলির অপরিণত সদ্য গজিয়ে উঠতে থাকা প্রলেতারিয়েত শ্রেণীর পার্টি, তাই পেটি বুর্জোয়া বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর তারা সমাজতন্ত্র গড়বার লক্ষ্য ঘোষণা করে, বাস্তবের সাপেক্ষে তা যতই সুদূরপরাহত হোক না কেন। 

সামগ্রিক ভাবে বলা যায়, পুঁজিবাদ তার শোষণের মৌলিক ভিত্তিটার ওপর দাঁড়িয়ে নিরন্তর নিজেকে রূপান্তরিত করতে করতেই এগিয়েছে। অনুরূপ ভাবেই তার সংকট কেন্দ্রীভূত হতে থেকেছে ভিন্নতর সমাজে এবং সেই মতোই বিপ্লবের অক্ষও সরে সরে গেছে। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টির সাংগঠনিক দিক থেকে বিচার করলে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এরই সাথে অবিচ্ছেদ্য এক ঘটনা – ‘প্রলেতারিয়েত’-এর এক ধরণের শ্রেণী থেকে অন্য ধরণের শ্রেণীতে রূপান্তর। এক সময়ের এক দেশের যে শ্রেণী ছিল ‘প্রলেতারিয়েত’, পরবর্তী সময় সে রূপান্তরিত হয়ে যেতে পারে, হয়ে যায় এক সুবিধাবাদী শ্রেণীতে, এবং অন্য কোনও দেশের সেই শ্রেণী বা অন্য শ্রেণী রূপান্তরিত হতে পারে ‘প্রলেতারিয়েত’-এ। এ কোনও স্থবির বস্তু নয়, আসলে ‘প্রলেতারিয়েত’-এরও থাকে এক নিরন্তর গতিময়তা। কমিউনিস্ট পার্টি হল এই প্রলেতারিয়েতের পার্টি। ‘প্রলেতারিয়েত’-এর এই গতিময়তার সাথে অনুরূপ ভাবে গতিশীল থাকতে পারলেই, সেভাবেই তার সংগঠনকে রূপান্তরিত করে নিতে পারলেই কেবল একটা কমিউনিস্ট পার্টি তার সংগঠন দৃঢ়তর করতে পারে, তার সংগ্রাম নিরন্তর চালিয়ে বৈপ্লবিক লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। না হলেই সে গতিহীন ক্ষয়িষ্ণুতার পথে পা বাড়ায়। কমিউনিস্ট পার্টির ‘স্ট্রাকচার’-কে তাই কেবল ‘ফর্ম’-দিয়ে গ’ড়ে ওঠে না, ‘কনটেন্ট’ তার অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী, যাকে এক কথায় বর্ণনা করা হয়েছে ‘গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা’ শব্দে। ১৯২১ সালে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল-এর তৃতীয় কংগ্রেসে পার্টির স্ট্রাকচার সম্পর্কে মূলগত ভাবে বলা হয়েছিল : “কমিউনিস্ট পার্টি সংগঠনে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতাকে দেখতে হবে কেন্দ্রিকরণ এবং প্রলেতারিয় গণতন্ত্রের সংমিশ্রণ রূপে প্রকৃত একটি সিন্থেসিস হিসাবে”। সাংগঠনিক দিক থেকে এই সময়ে আমাদের প্রধান কর্তব্য তাই সবিস্তারে খুঁজে বার করা যে মহান রুশ বিপ্লবের একশো বছর পার হওয়ার পর সেই ‘প্রলেতারিয়েত’-এর গতিময়তা আজকের দিনে কোন শ্রেণী-ধারায় বইছে।  

 

[১] ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’-র ‘প্রলেতারিয়ানরা এবং কমিউনিস্টরা’, মার্কস ও এঙ্গেলস 

[২] ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’-র ‘বুর্জোয়া এবং প্রলেতারিয়ানরা’-র ১৮৮৮ সালের ফুটনোট, এঙ্গেলস  

[৩] ‘সাম্রাজ্যবাদ – পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ পর্যায়’ বইটির ১৯২০ সালের ভূমিকা, লেনিন 

[৪] ‘সাম্রাজ্যবাদ – পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ পর্যায়’-এর ‘পরগাছা বৃত্তি ও ক্ষয়িষ্ণুতা’, লেনিন 

[৫] ‘লেনিনবাদের ভিত্তি ও সমস্যা’-র ‘কৃষক সমস্যা’, স্তালিন 

[৬] ‘রাশিয়ায় পুঁজিবাদের বিকাশ’-এর ‘কৃষকসমাজের পৃথকীকরণ’ অধ্যায়ের ‘সিদ্ধান্তসমূহ’, লেনিন

[৭] ‘কার্ল মার্কস’ রচনার ‘মার্কসের অর্থনৈতিক মতবাদ’, লেনিন

[৮] ‘সাম্রাজ্যবাদ – পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ পর্যায়’-এর ‘পুঁজির রপ্তানি’, লেনিন

[৯] ‘লেনিনবাদের ভিত্তি ও সমস্যা’-র ‘লেনিনবাদের ঐতিহাসিক উৎস’, স্তালিন

 

 

 

 

 

বাসুদেব নাগ চৌধুরী, পিপ্‌ল্‌স্‌ ব্রিগেড। 

 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *