উত্তর ২৪ পরগণার সাধারন মানুষের কাছে টালা ব্রিজ যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন শ্রমিকদের কাছে তাঁদের রুজি রুটির প্রয়োজনে। আর সেই অতি কর্মব্যস্ততাময় টালা ব্রিজকেই বন্ধ করা হল পরিবহন শ্রমিকদের বুকে পা রেখে।

‘রেল ইন্ডিয়া টেকনিক্যাল আন্ড ইকোনমিক সার্ভিস’ ও ‘ক্ষিদিরপুর শিপ বিল্ডিং এজেন্সি’ সম্মিলিত ভাবে ঘোষনা করে যে টালা ব্রিজ বিপজ্জনক এবং ভারী এবং অতি ভারী যান চলাচল সম্পূর্ন ভাবে নিষিদ্ধ করার রিপোর্ট পাঠায় নবান্নতে। নবান্ন থেকে ফরমান জারি করা হয় যে মালবাহী গাড়ি এবং যাত্রী বহনকারী বাস চলাচল সম্পূর্ন ভাবে নিষিদ্ধ। শুধু তাই নয় সরকার থেকে বেশ কয়েকটি বাসের রুটকে বন্ধ করে দেওয়া হয়, AC 17B, 11A, S 14C ইত্যাদি। সেই সমস্ত রুটে নিযুক্ত পরিবহন কর্মীরা হয়ে পড়েন তুঘলকী সিদ্ধান্তের বিচারে বেকার। এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন হল যে সমস্ত পরিবহন কর্মীরা আজকে কর্মহীন তাঁদের দায়িত্ব কি নেবে সরকার?

টালা ব্রিজকে বন্ধ করে বেলগাছিয়া ব্রিজ এবং গৌড়িবাড়ি ব্রিজ দিয়ে যান চলাচল করানো হলেও পিডব্লুডি দ্বারা সেই ব্রিজগুলিও যে বিপদ সীমার ঊর্ধ্বে অবস্থানকারী হিসেবে চিহ্নিত তা হয়তো সারদা নথির মতোই চাপা পড়ে আছে। ঢাকুরিয়া ব্রিজ, টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড ব্রিজ, সাতরাগাছি ব্রিজ ও টালা ব্রিজ বিপদ সীমার ঊর্ধ্বে অবস্থানকারী হিসেবে চিহ্নিতকারী তথ্য পিডব্লুডি দ্বারা সরকারে কাছে অনেক আগেই পৌঁছে গেছে। তাছাড়া শিপ বিল্ডিং এজেন্সি কিভাবে পরিদর্শনে এলো টালা ব্রিজের।তাদের এক্তিয়ারই বা কি আছে?

রাজ্য সরকার বর্তমানে দোষারোপ করছে কেন্দ্রকে তাদের পর্যবেক্ষণ, অর্থসাহায্যে গড়িমসি ইত্যাদি দর্শে। অন্যদিকে কেন্দ্রের সরকার ব্যস্ত ধর্মের পুজো করে সমগ্র দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বাতাবরন সৃষ্টি করতে। সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেসের ট্রেড ইউনিয়নগুলি জোটবদ্ধ ভাবে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকারের মধ্যে চলছে শুধু প্রশ্ন উত্তরের পরিকল্পিত নাটিকা।

ন’পাড়া থেকে ধর্মতলা’গামী বাস 34C বাস এবং ডানলপ থেকে ধর্মতলা’গামী বাস 34B-র চলাচল সম্পূর্ন ভাবে স্হগিতও করে দেওয়া হয়েছে। 34C বাসকে আগে পাড়াপাড় করতে হত ১১ কিমি রাস্তা । এখন তাঁদের রুট দমদম ক্যান্টনমেন্ট দিয়ে ঘুরিয়ে করা হয়েছে ২৫ কিমি-তে, যেখানে তাঁদের পেট্রোলের খরচ হয়ে যাচ্ছে দ্বিগুন এবং তাঁরা আশানুরূপ যাত্রীও পাচ্ছেন না এবং বাসের ভাড়া বৃদ্ধিও করতে পারছেন না। একই অবস্হা 34B বাসেরও। তাছাড়া বেলঘড়িয়া থেকে 201, 234, 234/1 বাসগুলির সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবহন শ্রমিকদের দিষাহীন অবস্হাতেও ট্রেড ইউনিয়নগুলি চুপ করে বসে আছে।

টালা ব্রিজে গাড়ি চলাচল বন্ধ হওয়ার পর থেকে অতিরিক্ত তৎপরতায় ২৬ লক্ষ টাকা খরচ করে হাইট বার বানিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে ভারী ও অতি ভারী গাড়িগুলি চলতে না পারে। এদিকে টালা ব্রিজ ভেঙ্গে পুনর্নির্মাণ করার কথা বলা হলেও ব্রিজের নীচে প্রায় ৫০০ জনের ওপর বস্তি পরিবার থাকে যাদের পুর্নবাসনের কথা বলা হলেও তার কোনো সুনিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।শুধু তাই নয়, তৃণমূল শাসকদের আমলে পুর্নবাসনের প্রক্রিয়া যে যুগান্তকারীভাবে ব্যর্থ তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। সরকার বর্তমান পদক্ষেপের মাধ্যমে কর্পোরেট প্রাইভেট কোম্পানীগুলিকে ব্রিজ মেরামতীর কাজ করানোর প্রহসন যে খুব শীঘ্রই আনতে চলেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

হীরকের দেশে পরিবহন শ্রমিকদের একজোট হয়ে পথে নামার অঙ্গীকার ছাড়া কোনো উপায়ই খোলা নেই।

Similar Posts

1 Comment

  1. Aei post tar boktobbo thyk poriskar noi. Tala bridge toh saratay hobei. Tar jonyo ja asubidha seta amader mene nitay hobay. Otherwise this will collapse like majher hat bridge.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *